ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্বকে চুলকানি ও ফুসকুড়ি – এলার্জি না ফাংগাল ইনফেকশন?

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৯ জুলাই ২০২৫

ত্বকে চুলকানি ও ফুসকুড়ি – এলার্জি না ফাংগাল ইনফেকশন?

ছ‌বি: প্রতীকী

আমাদের অনেকেরই হঠাৎ করে ত্বকে চুলকানি শুরু হয়, তারপর ছোট ছোট লাল দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। কখনো তা ছড়িয়ে পড়ে, আবার কখনো শুধু নির্দিষ্ট জায়গাতেই থাকে। অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না এটি এলার্জি, না কি ফাংগাল ইনফেকশন। চুলকানি ও ফুসকুড়ি দুটোই এই দুটি সমস্যায় দেখা যেতে পারে, কিন্তু এদের কারণ ও চিকিৎসা ভিন্ন। তাই সঠিকভাবে বুঝে নেয়া জরুরি।

এলার্জি সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিপ্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তু শরীর সহ্য করতে না পারলে, সেটিকে ‘অ্যালার্জেন’ বলা হয়। যেমন—ধুলা, ফুলের রেণু, কিছু খাবার, কৃত্রিম প্রসাধনী, কাপড়ের রঙ বা কেমিকেল ইত্যাদি। শরীর যখন এগুলোর সংস্পর্শে আসে, তখন ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এলার্জির ফলে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ত্বক শুকনো হয়ে যায়, ফাটে বা জ্বালাপোড়া করে। এলার্জি হঠাৎ করে শুরু হতে পারে এবং আবার কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পর চলে যেতে পারে, যদি অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা যায়।

অন্যদিকে, ফাংগাল ইনফেকশন বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা সৃষ্টি হয়, যা ত্বকে বাসা বাঁধে। এই ছত্রাক সাধারণত স্যাঁতসেঁতে, ঘামযুক্ত জায়গায় দ্রুত ছড়ায়। যেমন—বগল, কোমরের ভাঁজ, হাঁটুর পেছন, আঙুলের ফাঁকে, এমনকি মাথার ত্বকেও হতে পারে। এই ইনফেকশনে চুলকানি হয়, তবে সেটা গভীর ও বিরক্তিকর ধরনের হয়। সংক্রমিত জায়গাগুলো লাল হয়ে যায়, মাঝে মাঝে চাকা চাকা ভাব দেখা যায় এবং চারপাশে বেড়ে যেতে থাকে। অনেক সময় ফাঙ্গাল ইনফেকশন জায়গা বদলায় বা আশেপাশের সুস্থ ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। নখ বা মাথার তালুতে হলে চুল পড়ে যেতে পারে।

এলার্জি সাধারণত সংক্রমণ ছড়ায় না, তবে ফাংগাল ইনফেকশন ছড়াতে পারে। এটি একজনের থেকে আরেকজনে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি একই তোয়ালে, জামাকাপড় বা চিরুনি ব্যবহার করা হয়। তাই ফাংগাল ইনফেকশন হলে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আলাদা ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসার দিক থেকে দেখলে, এলার্জি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ বা মলম ব্যবহারে উপশম পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অ্যালার্জির উৎস চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলা। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয়। অন্যদিকে, ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিফাংগাল মলম বা ওষুধ লাগে। চিকিৎসার সময় নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সংক্রমিত জায়গা শুকনো রাখা খুব জরুরি।

চুলকানি ও ফুসকুড়ি যদি দীর্ঘদিন থাকে, ওষুধে না কমে, জায়গা বদলায় বা খারাপের দিকে যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় এগুলো ত্বকের অন্য গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।

এলার্জি ও ফাংগাল ইনফেকশনের উপসর্গ অনেকটা মিল থাকলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। এলার্জি আসে বাইরের উপাদানের প্রতি শরীরের অতিপ্রতিক্রিয়া হিসেবে, আর ফাংগাল ইনফেকশন আসে এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে। সঠিকভাবে চিহ্নিত করে চিকিৎসা নিলে দুই ধরনের সমস্যাই ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিজের ত্বকের প্রতি যত্নবান হওয়া, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী বা রাসায়নিক থেকে দূরে থাকা এই দুই সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।

এম.কে.

×