
দৈনিক জনকণ্ঠ
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত পানিহাটা-তারানি পাহাড় এখনো অনেক পর্যটকের নজর এড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই স্থানটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার সম্ভার।
নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে, রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের এই পাহাড়ি জনপদে যাওয়া যায় সহজ পথেই। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় গড়ে ৩৫-৪৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায় এবং যাতায়াতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুর না গিয়েও নকলা উপজেলা হয়ে নালিতাবাড়ী যাওয়ার বিকল্প ও সহজ পথ রয়েছে। নালিতাবাড়ী শহরের গড়কান্দা মোড় থেকে ভোগাই নদীর ওপর সেতু পেরিয়ে যেতে হয় চায়না মোড়। সেখান থেকে উত্তরে মাত্র এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই চোখে পড়ে সবুজে ঘেরা এই পাহাড়ি সৌন্দর্য।
এখানকার পরিবেশ শান্ত ও মনোরম। দূরে ভারতের তুরা পাহাড় আবছা কুয়াশায় ঢাকা, সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। নদীর স্বচ্ছ জলে দেখা যায় নুড়ি পাথরের ঝিলিক। ছোট ছোট টিলা, আঁকাবাঁকা সড়কপথ ও মাঝেমধ্যে ছুটে চলা ট্রাকের দৃশ্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।
পাশাপাশি রয়েছে খ্রিস্টান উপাসনালয়, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা।
স্থানীয়রা মনে করেন, যথাযথ উদ্যোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পর্যটন পরিকল্পনার মাধ্যমে পানিহাটা-তারানি পাহাড় হয়ে উঠতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি বিনিয়োগ এলে এখানে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আয়েও অবদান রাখতে পারবে এই এলাকা।
নালিতাবাড়ীর পাচঁগাও এর বাসিন্দা নাসিদুল ইসলাম নাইছ বলেন, এই জায়গাটা আমাদের এলাকার জন্য একটা আশীর্বাদ।
আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু পানিহাটা তারানির মতো এমন সৌন্দর্য খুব কমই দেখেছি। খুব সকালে বা বিকেল বেলায় যখন কুয়াশা আর মেঘে চারপাশ ঢেকে থাকে, তখন একদম স্বর্গের মতো লাগে। সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি একটু উদ্যোগ নেয়, তাহলে এটা বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্থানের একটা হয়ে উঠবে।
নালিতাবাড়ীর বাঘবেড় গ্রামের যুবক বিজয় বলেন, আমরা বন্ধুরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে যাই। মেঘের ভেতর দিয়ে তুরা পাহাড় দেখা যায়, নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় একটা আলাদা অনুভূতি দেয়। আমি চাই সরকার একটু নজর দিক এই জায়গাটার দিকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো হলে অনেকেই এখানে আসবে। আমরা নিজেরাও এই স্থান পরিচিত করতে কাজ করছি।
একই উপজেলার আরিফ আলভি বলেন আমার দোকানে মাঝেমধ্যেই বাইরের পর্যটক আসে। তারা এখানে এসে অবাক হয়ে যায় এত সুন্দর একটা জায়গা অথচ কোনো প্রচার নেই! আমি নিজেও চাই এখানে একটা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। তাতে আমাদের ব্যবসারও প্রসার হবে, এলাকার লোকজনের কর্মসংস্থান হবে।
প্রকৃতি, পাহাড় ও মেঘের এই লুকোচুরি মুগ্ধ করবে যেকোনো পর্যটককে। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হলে পানিহাটা তারানি হয়ে উঠতে পারে শেরপুর জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
হ্যাপী