
আমাদের দেশের বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষিত মায়েদের বাচ্চার দেখাশোনার কথা চিন্তা করে কর্মময় জীবন হতে ফিরে আসতে হয়। কেউ কেউ বাচ্চাদের কথা ভেবে চাকরিতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে একদম ঝেরে ফেলে দেয়। কারও কারও চাকরির পাশাপাশি বাচ্চা নিয়ে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমনকি কেউ কেউ বাধ্য হয়ে সাহায্যকারীর কাছে বাচ্চা রেখে চাকরিতে যায়, যাতে করে বাচ্চাদের অনেক অত্যাচার সইতে হয়। এমন অঘটন রীতিমতো ঘটে যাচ্ছে। এতে বাচ্চাদের হুমকির মধ্যে রেখে মায়েদের কর্মস্থলে যেতে হয়। আর শিল্পায়নের প্রভাবে দিন দিন পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে এখন কেউ বাসাবাড়িতে সাহায্যকারীর কাজ করতে রাজি হয় না। সবাই ভালো বেতনের আশায় ছুটে যায় পোশাক কারখানাসহ আরও হরেক রকম কাজের সন্ধানে। এটাও একটা ভালো মাধ্যম যাতে দরিদ্রতা হ্রাস পাচ্ছে অনেকাংশে। এখন কথা হলো, সবাই যদি চাকরিতে ছুটে যায় তাহলে বাচ্চাদের দেখাশোনা কে করবে? আর পারিবারিকভাবে কর্মজীবী মহিলাদের সুযোগ দেওয়ার মতো আমাদের দেশে সেরকম মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি, আছে হয়তো গুটিকয়েক। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মজীবী মায়েদের বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে বৃদ্ধ দাদা-দাদু কিংবা নানা-নানুও বাচ্চাদের রাখার মতো থাকেন না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। দেখা যায় চাকরি এবং বাচ্চাদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে মায়েদের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়। সংসারে শুরু হয় নানা ধরনের অশান্তি।
আমাদের দেশে যদি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী মহিলাদের চাকরির পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার মতো মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করা হতো তাহলে মায়েদের আর এভাবে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হতো না। এতে উচ্চশিক্ষিত হয়েও ঘরে বসে না থেকে কর্মজীবনে ফিরে যেত অনেক মায়ে। আমাদের দেশে বাচ্চারা অপরিচিত কারও কাছে নিরাপদ নয় তাই সরকারিভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানাই। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় গুটিকয়েক ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে কিন্তু আমি মনে করি এটি শুধু রাজধানী কিংবা কয়েকটা জেলা শহরে না করে পুরো দেশে স্থাপন করা জরুরি। এর মাধ্যমে বাচ্চাদের নিয়ে মায়েদের ভোগান্তি যেমন কমে যাবে তেমনি সেসব ডে-কেয়ার সেন্টারে কাজ করার সুযোগ হবে অনেক মানুষের। এতে বেকারত্ব কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হবে। ফলে অগণিত ডে-কেয়ার সেন্টারে কোমলমতি শিশুরা থাকবে শতভাগ নিরাপদ আর মায়েরা থাকবেন চিন্তামুক্ত। যাতে কর্মজীবী মায়েরা কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আরও অনেক মায়ের কাজের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে পারবে। উন্নত দেশগুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকার কারণেই মায়েদের কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ যেভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ফলে এটি আরও উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে বলে আমি আশা করছি। সরকারের কাছে এটি প্রত্যাশা করছি যাতে অধিকাংশ মায়েরা শিক্ষিত হয়েও গৃহিণী নামক ঘরকুনো না থেকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেদের দেশের সেবায় নিয়োজিত রাখতে পারবে। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেকে ঢেলে সাজাতে পারবে। নারীদের একটা পরিচয় থাকবে। শিক্ষিত হয়েও যারা বাচ্চাদের জন্য ঘরকুনো হয়ে থাকে সেসব নারীর পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু থাকে না, অন্যদিকে একটা সময় যখন বাচ্চারা নিজেদের অবস্থানে চলে যায় তখন সেসব মায়ের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। নিজের বলতে কিছুই থাকে না। কখনো স্বামীর করুণা নিয়ে, কখনো সন্তানের করুণা নিয়ে নিজেকে কোনোরকম টিকিয়ে রাখতে হয়। অনেক অনেক উচ্চশিক্ষিত এমন মায়েদের মাঝপথে হঠাৎ আকস্মিকভাবে স্বামীর মৃত্যু কিংবা সন্তানদের অবহেলিতজনিত কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে আমার একটাই আহ্বান, মহিলাদের কাজে আগ্রহী করার জন্য অতি অবশ্যই ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতিও অনুরোধ- দিবাযত্ন কেন্দ্র বা ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীর অগ্রযাত্রার জন্য এটি জরুরি।
প্যানেল/মো.