ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

বাংলাদেশকে সোনার খনি মনে করা শেখ হাসিনা লোভ সামলাতে পারছে না

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশকে সোনার খনি মনে করা শেখ হাসিনা লোভ সামলাতে পারছে না

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশকে সোনার খনি মনে করা শেখ হাসিনা লোভ সামলাতে পারছে না। এই কারণে সে প্রয়োজনে আরও রক্ত ঝরাবে, আরও চক্রান্ত করবে, আরও লাশ ফেলবে। বাহিরে পালিয়ে থাকলেও সে এসব ঘটনা ঘটাবে।

রিজভী আরও বলেন, এনসিপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল, ছাত্ররা গঠন করেছে। 

তারা ঘোষণা দিয়েছে মার্চ ফর গোপালগঞ্জ। এই ঘোষণার কথা শুনে শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জে তাদের দলের লোক, যুবলীগ-ছাত্রলীগ যারা ঘাপটি মেরে আছে তাদেরকে বলেছে তোমরা সেখানে তাদেরকে যেতে দিবেনা যেকোনো মূল্যে। যেকোনো মূল্যে মানে যারা যাবে তাদেরকে তোমরা দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিও কোন অসুবিধা নেই। এইটা শেখ হাসিনার নির্দেশ। আর এ কারণেই তাদের (এনসিপির) নেতৃবৃন্দের ওপর ঝাপিয়ে পরা হয়েছিল। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাস্তায় নেমে আসতে হয়। আমার বক্তব্য একটাই, আজকে গণতন্ত্রের জন্য এতো লড়াই, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আর ছাত্র-জনতার। কিন্তু কেন আজ বিভেদ? এককভাবে কিছু করা যায় না, সম্মিলিতভাবে আমাদের শক্তি যেটি ছিল সেটি থাকলে কোন পতিত স্বৈরাচার সরকার সাহস পেত না কিছু করার জন্য।

রিজভী বলেন, ঢাকার মিডফোর্ডের সামনে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে আঘাত করে করে হত্যা করা হয়েছে। সমাজে যদি খুনাখুনি হয়, কেউ কাউকে আক্রমণ করে তাহলে এর প্রতিবাদ যারা করেন, তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে করেন। 

আমরা এখানে দেখলাম প্রশাসন সরকারকে কিছু না বলে কিছু লোক বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালো। হাজার মাইল দূরে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, কুৎসা রটাচ্ছে। 

কিন্তু সন্ত্রাসীদের ধরবে কে রাজনৈতিক দল না পুলিশ? কৈ তাদের বিরুদ্ধে কিছু না বলে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন, তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন, তার মানে উদ্দেশ্য তো ভালো নয়।

খুলনায় মাহাবুব নামে বিএনপির একজনকে প্রথমে গুলি করা হলো, চাঁদপুরে মসজিদের ইমামের খুতবা নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হলো- এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তো কোন স্লোগান দিলেন না, তাদের নামে তো কোন ধরনের অপপ্রচার চালালেন না। 

গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাহিরে না হলে সেখানে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এনসিপির লোকজনের ওপর কীভাবে আক্রমণ করে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, সুযোগ পেয়েছে হাসিনা। সে তো পাশের দেশে থাকে।  হাসিনা বাংলাদেশ চায়না, সে বাংলাদেশে শান্তির চায়না, স্বস্তি চায়না, গণতন্ত্র চায়না, কথা বলার স্বাধীনতা চায়না, সে চায় রাজত্ব, যারা তার বিরোধিতা করবে তাদের রক্ত আর লাশ।

আজ শুক্রবার বিকেলে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কালোব্যাজ ধারণ ও শোকর‍্যালি অনুষ্ঠানপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকেল সাড়ে চারটায় নগরীর সদর রোডে জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী আরও বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা একসাথে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। অথচ আজ আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। সরকারের মধ্যে থেকে কোন রাজনৈতিক দল পায়ে পাড়া দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে শেখ হাসিনা। আমরা তাদের এধরণের কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলবো।

রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমাদের এ শোক র‌্যালি। আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মতো শহীদরা যারা জীবন দিয়ে দানব শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল তাদের স্মরণে আমাদের এ আয়োজন। 

সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, বেগম জিয়া জীবনে শুধু গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াই করে গেছেন। একবার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, সেইখান থেকে আমাদের নেত্রী গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। 

এরপর শেখ হাসিনা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের নেত্রীকে হয়রানি করা হয়েছে, নানানভাবে নিপীড়ন নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে বন্দী করা হয়েছিল এমন কারাগারে যেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কারণ শেখ হাসিনা মনে করে বেগম জিয়া বাহিরে থাকা মানে তার বিপদ।

গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা একটি দলের প্রধানকে অপমানসূচক কথা বলেছেন, কিন্তু আমরা আপনার ওপর রাগ করে বসে থাকিনি, বিএনপির পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকৃত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আপনারা পায়ে পাড়া দিয়ে নানান ধরনের কাজ কারবার করছেন।

সভা শেষে বিকাল পাঁচটায় একটি শোকর‍্যালি বের করা হয়।

র‍্যালিতে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান সহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করেন।

র‍্যালিটি নগরীর সদর রোড হয়ে আমতলার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

 

রাজু

আরো পড়ুন  

×