ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

ইতিহাসের দায় ও ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি

নুসরাত জাহান (স্মরণিকা), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫

ইতিহাসের দায় ও ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি

গত বছরের জুলাই মাসটা যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা এক অগ্নিময় অধ্যায়। সেই সময়ে রাস্তায় নামে হাজারো মুখ- শুধু মুখ নয়, প্রত্যেকে ছিল প্রতিরোধের প্রতীক। রাস্তায় পায়ে পায়ে জমেছিল ক্ষোভ, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলেছিল বঞ্চনার বিরুদ্ধে, আর চেতনায় জেগেছিল পরিবর্তনের জোরালো আকাক্সক্ষা। দীর্ঘ সময় ধরে জনগণ ছিল এক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের বলির পাঁঠা। একদিকে ছিল ক্ষমতাসীনদের অবৈধ দখলদারিত্ব, অন্যদিকে জনগণের কণ্ঠরোধ, বাক-স্বাধীনতার পায়ে শিকল, আর সর্বোপরি ভোটাধিকার হরণের নির্মম অপপ্রয়াস। মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল বিশ্বাস, হারিয়ে ফেলেছিল নিজের রাষ্ট্রে নিজের নাগরিকত্বের আত্মবিশ্বাস।
এই অভ্যুত্থান ছিল পূর্বাপর ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এটি কেবল একটি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, একটি কাঠামোগত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কথা শোনে না, যে রাষ্ট্র মানুষকে অবিশ্বাস করে, ভয় পায়- তার পতন অবশ্যম্ভাবী। জুলাইয়ে সেই পতন ঘটেছিল গণচেতনার ঢেউয়ে। ছাত্র, তরুণ, নারী, শ্রমিক- সবার কণ্ঠ একসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল : ‘আর না।’
তবে আজ, একবছর পর দাঁড়িয়ে ফিরে তাকালে প্রশ্ন জাগে- কী বদলেছে? শুধু ব্যক্তি বা সরকার নয়, বদলেছে কি রাষ্ট্রের চেতনা? মিডিয়ায় এখনো অনেক সময় সত্যকে ছেঁটে ফেলা হয়, বিরোধী কণ্ঠকে এখনো অনেক সময় ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে চিহ্নিত করা হয়, আর প্রশাসনের ভিতরে এখনো অনেক ক্ষেত্রে পুরানো সেই একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয়।
জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিরোধ কেবল একদিনের নয়, এটা প্রতিদিনের চর্চা। একবার রাস্তা দখল করলেই যথেষ্ট নয়, বরং রোজকার প্রশাসন, নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্তে জনগণের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করাই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র। ইতিহাস শুধু গৌরবগাথা নয়, এটি দায়বদ্ধতার দর্পণ।
তাই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান যেন শুধু স্মৃতির চিহ্ন না হয়ে, হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের পথনির্দেশ- যেখানে ফ্যাসিবাদ নয়, থাকবে স্বাধীনতা; দমন নয়, থাকবে অধিকার; আর ভয়ের সংস্কৃতির বদলে গড়ে উঠবে গণতান্ত্রিক সাহসের এক নতুন দেশ।
 

প্যানেল/মো.

×