ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের বার্তা স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্টের

বাংলাদেশে স্টারলিংকের  আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে স্টারলিংকের  আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

.

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’। শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারলিংকের কার্যক্রমের সূচনা ঘোষণা করেন স্টারলিংক ও স্পেসএক্সের গেøাবাল অপারেশন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার।
তিনি বলেন স্টারলিংককে শুধু একটি ইন্টারনেট সেবা নয়, বরং ‘নির্ভরযোগ্য এবং স্পর্শকাতর লাইফ লাইন’। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
ড্রেয়ার সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যৌথ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার আশা প্রকাশ করেন।
ড্রেয়ার বাংলাদেশের সরকারের দ্রæততা ও দৃঢ়তার প্রশংসা করে বলেন, প্রাথমিক আলোচনার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই স্টারলিংক সেবার বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৫ সালের মে মাসে অনুমোদন চূড়ান্ত হয় এবং এর পর পরই প্রথম বাংলাদেশি গ্রাহকরা সংযুক্ত হন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দিতে শুরু করেছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং আমাদের দেশের ডিজিটাল কাঠামোর জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। 
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্টারলিংকের গেøাবাল পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস ডিরেক্টর রিচার্ড গ্রিফিথস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জহিরুল ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
প্রায় দুই দশক আগে স্পেসএক্স-এ যোগ দেওয়া এবং বর্তমানে স্টারলিংকের বৈশ্বিক কার্যক্রম ও প্রভাব উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়া লরেন ড্রেয়ার বাংলাদেশের সরকারকে অভিনন্দন জানান তাদের দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের জন্য, যা দেশের জনগণের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ যখন কেবল চিন্তাভাবনা করছে, বাংলাদেশ তখন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইন্টারনেটকে মানব সম্ভাবনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে, আপনারা আপনাদের দেশকে অন্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য একটি মডেলে পরিণত করেছেন।’
বর্তমানে প্রায় ১৫০টি দেশ ও অঞ্চলে স্টারলিংকের উচ্চ-গতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা সক্রিয় আছে, যা স্থলভিত্তিক অবকাঠামোর ওপর নির্ভর না করে স্থিতিশীল, স¤প্রসারণযোগ্য এবং প্রতিক‚ল পরিবেশেও কার্যকর। ফলে এটি বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যময় দেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখন এই সেবার মাধ্যমে দূরবর্তী গ্রাম, সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অঞ্চলগুলো ইন্টারনেট সংযুক্তির আওতায় এসেছে।
ড্রেয়ার বলেন, ‘এটা শুধু স্যাটেলাইটের ব্যাপার নয়, আমরা দূরশিক্ষা, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল উদ্যোক্তা গড়ে তোলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সুযোগের দ্বার খুলে দিচ্ছি।’ তিনি স্থানীয় অংশীদার যেমন ফেলিসিটি আইডিসি এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ভ‚মিকাও স্বীকার করেন এবং বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্ভাবক ও জাতীয় অংশীদারদের সহযোগিতা অপরিহার্য।
যে মুহূর্তে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক সহনশীলতার সমার্থক, তখন স্টারলিংকের উদ্বোধন বাংলাদেশের সরকারের প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করে যে, ইন্টারনেট কোনো বিলাসিতা নয়, এটি অধিকার।
লরেন ড্রেয়ার বলেন, ‘আমরা একসাথে যে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছি, তা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের, যারা এখন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অসীম সম্ভাবনার দুয়ারে প্রবেশাধিকার পাবে।’
 

প্যানেল মজি

×