ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

পিঁপড়া সম্পর্কে যে অবাক করা তথ্য দিয়েছে আল কোরআন

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৮ জুলাই ২০২৫

পিঁপড়া সম্পর্কে যে অবাক করা তথ্য দিয়েছে আল কোরআন

ছবি: সংগৃহীত।

পিঁপড়া—একটি ক্ষুদ্র প্রজাতির প্রাণী হলেও, পবিত্র কোরআনে এদের একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। কোরআনের সূরা "আন-নামল" (অর্থ: পিঁপড়া) এ নবী সুলাইমান (আ.) এবং একটি নারী পিঁপড়ার মধ্যকার কথোপকথনের একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা শুধু ধর্মীয় নয়—একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিস্ময়ও।

সুলাইমান (আ.) ছিলেন এক অলৌকিক ক্ষমতার নবী, যিনি জিন, পশুপাখি, এমনকি পিঁপড়ার ভাষাও বুঝতেন। একবার তিনি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে একটি অঞ্চলে যাচ্ছিলেন, যেখানে ছিল পিঁপড়াদের বসতি। তখন এক পিঁপড়া সতর্ক করে বলে, "তোমরা তোমাদের ঘরে ঢুকে পড়ো, যাতে সুলাইমান ও তার সৈন্যবাহিনী অজান্তেই তোমাদের পদপিষ্ট না করে ফেলে।"

এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সূরা আন-নামলের ১৮ নম্বর আয়াতে, যেখানে কোরআন আশ্চর্যজনকভাবে "নামলাহ" (নারী পিঁপড়া) শব্দটি ব্যবহার করেছে। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী এই শব্দ এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াপদগুলো স্ত্রীলিঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে, যা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের সাথে হুবহু মিলে যায়।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কী বলছে গবেষণা?

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, পিঁপড়ার সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত: রানী পিঁপড়া, পুরুষ পিঁপড়া ও শ্রমিক পিঁপড়া। আশ্চর্যজনকভাবে, সব শ্রমিক পিঁপড়া নারী—যারা খাবার সংগ্রহ করে, বাসা তৈরি করে এবং বাইরের বিপদ সম্পর্কে অন্যদের সতর্ক করে।

এক সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে বলা হয়েছে,

“Wingless males do not participate in brood care and active foraging outside the nest.”

অর্থাৎ, ডানা নেই এমন পুরুষ পিঁপড়ারা বাইরে খাবার খুঁজতে যায় না, এমনকি বাসার কাজেও অংশ নেয় না। ফলে সূরার বর্ণনায় যে পিঁপড়াটি সতর্কতা দিয়েছিল সে যে একজন নারী শ্রমিক পিঁপড়া—তা বিজ্ঞানও আজ প্রমাণ করে দিয়েছে।

ডানাবিহীন এবং গায়েবের খবর

আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো—পুরুষ পিঁপড়ার ডানা থাকে, তাই তারা চাইলে উড়ে পালাতে পারত। কিন্তু আয়াতে পিঁপড়াদের মাটির নিচে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে—যা কেবল নারী শ্রমিক পিঁপড়াদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এ ঘটনা আরও এক বাস্তবতা তুলে ধরে যে, সুলাইমান (আ.) গায়েব জানতেন না—কারণ পিঁপড়ারা বলেছিল যেন “অজান্তে” পদপিষ্ট না করে। অর্থাৎ কোনো নবীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া অদৃশ্য বা গায়েবের খবর জানতেন না।

সুলাইমান (আ.)-এর মতো এক বিশ্বজয়ী নবী যখন ক্ষুদ্র এক পিঁপড়ার কথায় মুচকি হাসেন এবং বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন—তখন কোরআনের এই বর্ণনা হয়ে ওঠে মহানুভবতা ও নেতৃত্বের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।

এই আয়াত থেকে মুফাসসিরগণ যে শিক্ষা তুলে ধরেছেন:

  • পশুপাখিরও একধরনের বিশেষ বুদ্ধিমত্তা থাকে।
  • নবীগণ গায়েব জানেন না—এটা আল্লাহর একচ্ছত্র জ্ঞান।
  • আল্লাহ তাআলা জীবজন্তুকেও হেদায়েতের কিছু অংশ দান করেন।
  • সত্যিকার নেতারা ছোটদের কথাও গুরুত্ব সহকারে শোনেন।
  • কোরআনের প্রতিটি আয়াতে লুকিয়ে আছে গভীর জ্ঞান ও প্রমাণ।

 

সূরা আন-নামলের এই আয়াতে শুধু একটি পিঁপড়ার গল্প নয়, বরং ১৪০০ বছর আগে দেওয়া এমন এক বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে, যা আজকের যুগে গবেষণাগারে নিশ্চিত হচ্ছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে—পবিত্র কোরআন শুধুই ধর্মীয় বই নয়, এটি বিজ্ঞানের এক অসীম ভাণ্ডারও।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=8lx-91wiOmU

নুসরাত

×