
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বের প্রথম ট্রায়ালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তৈরি হল এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। যুক্তরাজ্যে নতুন এক ধরনের আইভিএফ (IVF) পদ্ধতির সাহায্যে জন্ম নিয়েছে ৮টি সুস্থ শিশু, যাদের শরীরে রয়েছে তিন ব্যক্তির ডিএনএ! এই চিকিৎসা মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধে এক বৈপ্লবিক পন্থা হিসেবে ইতিমধ্যেই আলোচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ৫০০০টি শিশুর মধ্যে ১টি মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগে আক্রান্ত হয়, যা থেকে হতে পারে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, ডায়াবেটিস বা পেশি ক্ষয়ের মতো জটিল সমস্যা। এই রোগের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই বললেই চলে। নতুন এই আইভিএফ পদ্ধতি সেই সমস্যারই সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা যায়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএতে মিউটেশন বহনকারী ৭ জন নারীর গর্ভে এই ৮ শিশু জন্ম নেয়—যাদের মধ্যে রয়েছে ৪ জন ছেলে ও ৪ জন মেয়ে, এবং একটি অভিন্ন যমজ জুটি। কোনও শিশুর শরীরেই মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
এই চিকিৎসার পদ্ধতির নাম প্রো-নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার। এতে মায়ের ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া-যুক্ত ডোনার ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলে শিশুর শরীরে থাকে মায়ের ও বাবার জিনের পাশাপাশি তৃতীয় একজন নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ।
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাইন হসপিটালস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের গবেষক দল এই কৌশল উদ্ভাবন করেছে। গবেষণায় অর্থ সহায়তা দিয়েছে এনএইচএস ইংল্যান্ড ও ওয়েলকাম ট্রাস্ট।
অধ্যাপক স্যার ডগ টার্নবুল এই সাফল্যকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করে জানান, “মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ পরিবারের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে এমন নারীরা এখন সন্তান ধারণ করতে পারবেন, যাদের জিনে এই রোগ বহন করে।”
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার-এর মতে, এটি ছিল একটি মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে এই অসাধারণ IVF চিকিৎসা।
এই সাফল্য ভবিষ্যতে হাজারো পরিবারকে রোগমুক্ত সন্তান জন্মদানের নতুন আশা এনে দেবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইমরান