ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিদিন ব্যবহৃত ৫টি অ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পাচার করছে!

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

প্রতিদিন ব্যবহৃত ৫টি অ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পাচার করছে!

ছ‌বি: প্রতীকী

আমরা প্রতিদিন অনেক অ্যাপ ব্যবহার করি – ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ম্যাপ, টিকটক, কিংবা নানা রকম গেম বা ইউটিলিটি অ্যাপ। এসব অ্যাপ আমাদের সময় বাঁচায়, যোগাযোগ সহজ করে এবং বিনোদনের উৎস হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আমরা খুব কমই জানি যে, এসব অ্যাপের অনেকগুলোই আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপনে সংগ্রহ করে এবং তা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে আমাদের গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

প্রথমেই বলা যায়, ফেসবুক অ্যাপটি। আপনি প্রতিদিন ফেসবুকে কী পোস্ট করছেন, কার সাথে চ্যাট করছেন, কী পড়ছেন বা কতক্ষণ স্ক্রল করছেন – সবকিছু ফেসবুক ট্র্যাক করে। শুধু তাই নয়, আপনার লোকেশন, ফোন কন্ট্যাক্টস, এমনকি আপনি কোন অ্যাপে কত সময় কাটান, সেটাও ফেসবুকের কাছে ধরা পড়ে যায়। ফেসবুক এই তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে লক্ষ করে বিজ্ঞাপন দেখায়। আবার এই তথ্য তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপনদাতাদেরও সরবরাহ করা হয়।

দ্বিতীয় যে অ্যাপটির কথা বলা দরকার তা হলো – টিকটক। এটি একটি চাইনিজ কোম্পানির তৈরি অ্যাপ। এতে আপনি যত ভিডিও দেখেন বা আপলোড করেন, তা তো ট্র্যাক হয়ই, তার পাশাপাশি আপনার ফোনের হার্ডওয়্যার, লোকেশন, এমনকি কী-বোর্ডে কী টাইপ করছেন সেটাও রেকর্ড হতে পারে। কিছু কিছু গবেষণা বলছে, টিকটকের অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন ডেটা কালেকশন করে যা ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারেন না।

তৃতীয় অ্যাপটি হলো – গুগল ম্যাপস। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কীভাবে যাচ্ছেন, কোথায় কতক্ষণ অবস্থান করছেন – এসব তথ্য গুগল ম্যাপের মাধ্যমে গুগলের সার্ভারে জমা হচ্ছে প্রতিদিন। আপনি যদি লোকেশন সার্ভিস চালু রাখেন, তাহলে আপনার প্রতিটি চলাফেরা গুগল জানে। গুগল এই তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনার রুটিন, পছন্দ ও অভ্যাস সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরি করে। পরবর্তীতে সেটি ব্যবহার করে আপনাকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।

চতুর্থ অ্যাপটি হলো – হোয়াটসঅ্যাপ। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে এবং বলছে তারা মেসেজ পড়তে পারে না, তবে অ্যাপটি আপনার ফোনে থাকা কন্ট্যাক্ট লিস্ট, ব্যবহার সময়, লোকেশন ও অন্যান্য মেটাডেটা সংগ্রহ করে। হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা এখন ফেসবুকের হাতে, তাই তাদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়। আপনি কখন কাকে বার্তা পাঠান, কতক্ষণ কথা বলেন – এসব বিশ্লেষণ করে আপনার ডিজিটাল ছায়া তৈরি করা হয়।

পঞ্চম যে অ্যাপটি নিয়ে কথা বলা যায় তা হলো – ফ্রি গেমিং অ্যাপস। এইসব অ্যাপ গেমের ছলে আপনার ডিভাইস থেকে নানা রকম তথ্য চুরি করে। আপনি কী ডিভাইস ব্যবহার করছেন, আপনার লোকেশন, আপনি অন্য কোন অ্যাপ ব্যবহার করেন – এসব জানার পাশাপাশি অনেকে আপনার ফোনের মাইক্রোফোন বা ক্যামেরার এক্সেস চায়। আপনি না বুঝেই অ্যাকসেস দিয়ে দেন, আর তখনই শুরু হয় তথ্য পাচারের প্রক্রিয়া।

এই পাঁচটি অ্যাপ ছাড়াও আরও অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো আমাদের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রশ্ন হলো – কেন তারা এসব তথ্য চায়? এর মূল কারণ হলো টাকা। আজকের দিনে তথ্য মানেই ক্ষমতা ও অর্থ। বিজ্ঞাপনদাতা ও বড় কোম্পানিগুলো আপনাকে টার্গেট করতে চায়, আর সেই উদ্দেশ্যে তারা এইসব অ্যাপ থেকে আপনার তথ্য সংগ্রহ করে।

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, আপনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন তা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের জন্য নয়, অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, মতামত প্রভাবিত করা, এমনকি নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতেও ব্যবহার হতে পারে।

তাহলে কি এসব অ্যাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে? একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ অনেক অ্যাপ এখন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তবে কিছু সচেতনতা খুব জরুরি।

যেমন – কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে কী কী অনুমতি (Permission) চায়, তা খেয়াল করুন। লোকেশন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা বা কন্ট্যাক্ট অ্যাকসেস দেয়ার আগে ভাবুন আসলেই কি অ্যাপটির এসব দরকার? মাঝে মাঝে আপনার অ্যাপ পারমিশন সেটিংস যাচাই করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাকসেস বন্ধ করে দিন।

তাছাড়া সবসময় অফিসিয়াল ও আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করুন, এবং অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো– আপনার তথ্য আপনার সম্পদ। সেটা কীভাবে শেয়ার করছেন এবং কে নিচ্ছে– সেটা জানা আপনার অধিকার। আপনি সচেতন হলে অনেক বড় বিপদ এড়াতে পারবেন। আজই নিজের ফোনে থাকা অ্যাপগুলোর পারমিশন একবার দেখে নিন – আপনি অবাক হবেন!

এম.কে.

×