
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই চীনের সব পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল নামক মরণঘাতী মাদক ঢুকতে সাহায্য করছে। ফেন্টানিল একটি সিন্থেটিক (প্রস্তুতকৃত) ড্রাগ, যা হিরোইনের চেয়ে বহু গুণ বেশি শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার মানুষকে প্রতি বছর মেরে ফেলছে।
চীনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, এটা আমেরিকার নিজস্ব সমস্যা। তারা আগেই ফেন্টানিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে তারা প্রস্তুত, তবে ভয় দেখিয়ে বা চাপ দিয়ে কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
সম্প্রতি চীন আরও দুটি ফেন্টানিল তৈরির উপাদানকে (প্রিকার্সার কেমিকেল) নিয়ন্ত্রণের তালিকায় যুক্ত করেছে। একই সঙ্গে তারা "নিটাজিন" নামে আরেকটি বিপজ্জনক ড্রাগের ওপরও কড়াকড়ি নিয়েছে। চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, তারা যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
২০১৯ সালে চীন ফেন্টানিলকে পুরো ড্রাগ ক্লাস হিসেবে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। এতে সরাসরি চীন থেকে ফেন্টানিলের চালান অনেক কমে যায়। কিন্তু তখন থেকেই চোরাকারবারিরা কৌশল বদলে চীনের কারখানা থেকে কাঁচামাল (প্রিকার্সার কেমিকেল) মেক্সিকোর ল্যাবে পাচার করতে শুরু করে। মেক্সিকোর ড্রাগ কার্টেলগুলো সেসব দিয়ে তৈরি করে ফেন্টানিল এবং সেগুলোই আমেরিকায় পৌঁছায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কিছু কাজ করছে ঠিকই, তবে আরও অনেক কিছু করার আছে। যেমন, চীনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করে, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। আবার যেসব কেমিকেল সাধারণ ওষুধ বা শিল্পে ব্যবহার হয়, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন কারণ অপরাধীরা এসব কেমিকেল সামান্য বদলেই নতুন ফর্ম তৈরি করে নেয়।
চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের চাহিদা যতদিন থাকবে, ততদিন নিয়ন্ত্রণ দিয়ে পুরো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। চীনের এক সরকারি গবেষক সিএনএনকে বলেন, “এটা একটা বিড়াল-ইঁদুর খেলা। হাজারটা রাসায়নিক আছে যা দিয়ে ফেন্টানিল বানানো যায়, সব কেমিকেল আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।”
চীন নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তাই তারা দেখাতে চায়, তারা মাদক সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। তবে চীন বরাবরই বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের উদ্যোগকে স্বীকৃতি না দেয় এবং কেবল শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ভবিষ্যতে এই ইস্যুতে যৌথ কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যখন তাইওয়ান সফর করেন, তখন চীন প্রতিবাদস্বরূপ সমস্ত মাদক-সংক্রান্ত সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এক বৈঠকের মাধ্যমে কিছুটা সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
চীনের নিজস্ব অর্থনীতি বর্তমানে নানা চাপের মধ্যে রয়েছে। এই সময়ে মার্কিন শুল্ক তাদের জন্য বড় আঘাত। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন চাইছে একসঙ্গে বাণিজ্য, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে একটা ‘প্যাকেজ চুক্তি’ হোক, যাতে তারা ট্রাম্পকে চীনে আমন্ত্রণ জানাতে পারে এবং শুল্ক তুলে নিতে রাজি করাতে পারে।
মুমু ২