ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

প্রথম তিন মাসেই দেশ ছেড়েছেন ২৭ হাজার ৮৬ জন কানাডিয়ান নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:০০, ১৩ জুলাই ২০২৫

প্রথম তিন মাসেই দেশ ছেড়েছেন ২৭ হাজার ৮৬ জন কানাডিয়ান নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা

ছবি: সংগৃহীত

কানাডা, যা বহু মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের ঠিকানা, উন্নত ভবিষ্যতের আশ্রয়। কিন্তু দিন দিন সেই স্বপ্নের ফাটল স্পষ্ট হচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, চাকরির সংকট, মানসিক বিষণ্ণতা, এবং অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের ফলে অনেক অভিবাসী—এমনকি স্থায়ী নাগরিকরাও—দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কানাডার প্রধান শহরগুলো যেমন টরেন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে গত কয়েক বছরে বাসাভাড়া এবং সম্পত্তির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে নতুন আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বা নবাগত পেশাজীবীদের পক্ষে মাসিক খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

 

 

অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিদেশি ডিগ্রিধারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা কানাডার চাকরিবাজারে যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছেন নিম্নমানের বা খণ্ডকালীন কাজ করতে। সরকারি চাকরিতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার ও কোটা পদ্ধতি অভিবাসীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কানাডার বৈরী আবহাওয়া, দীর্ঘ শীতকাল, পরিবারবিহীন নিঃসঙ্গ জীবন ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা। এসব কারণে অনেক অভিবাসী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। মনোবিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানাচ্ছেন, বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে অভিবাসী সমাজে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২ লাখ ৯ হাজার ৪০০ জন অস্থায়ী বাসিন্দা—বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও ওয়ার্ক পারমিটধারী—কানাডা ছেড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংখ্যা শুধু প্রাথমিক চিত্র। কারণ সাধারণত তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সময়েই কানাডা ত্যাগের হার সবচেয়ে বেশি হয়।

 

 

অন্যদিকে একই সময়ে মাত্র ৯,৬৭৬ জন প্রবাসী কানাডায় ফিরে এসেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি।

বিশ্লেষকদের মতে, যারা কানাডাকে স্বপ্নের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন বাস্তবতা দেখে হতাশ। পিআর বা সিটিজেনশিপ পাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষা, সন্তানদের শিক্ষাগত ও পরিচয়ের সংকট, পরিবারকে সঙ্গে আনতে জটিল ভিসা প্রক্রিয়া—সব মিলিয়ে এখন অনেকেই ভাবছেন, কানাডা কি আদৌ তাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল?

এ অবস্থার মধ্যে চলতি বছরের মে মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত কানাডা ছাড়ার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

 

কানাডায় অভিবাসনের স্বপ্ন অনেকের কাছেই এখন বাস্তবতার কঠিন মুখোমুখি। যেখানে স্বপ্নের পথ অনেকটাই ঝাপসা।

ছামিয়া

×