
ছবিঃ সংগৃহীত
আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধাকে ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ খান তাপসের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ইউপি সদস্য সোহেল খানসহ ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারা যুবদল সভাপতি ইউপি সদস্য ফিরোজ খান তাপস ও রাসেল আকন নামের দুইজনকে আটক করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (১৩ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে খুরিয়ার খেয়াঘাট আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধাকে গত ১৬ জুন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন আমতলী সদর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ফিরোজ খান তাপস। ওই সময় তিনি (চেয়ারম্যান) আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো ব্যবস্থা নেননি—এমন অভিযোগ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধার।
এ ঘটনার তিন দিন পরে অর্থাৎ ১৯ জুন উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে শ্যামলের চায়ের দোকানে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে যুবদল সভাপতি ইউপি সদস্য ফিরোজ খান ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ২১ দিনের একটি দায়িত্বপত্রে স্বাক্ষর নেন। গত বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্য ফিরোজ খানের ২১ দিনের দায়িত্ব শেষ হয়।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে চেয়ারম্যান মিঠু খুরিয়ার খেয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে সেবা কার্যক্রম শুরু করেন। ওই সময় যুবদল সভাপতি তাপস খানের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী চেয়ারম্যানকে জোরপূর্বক টেনে হেঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সেবা নিতে আসা অর্ধ-শতাধিক নারী ও পুরুষ মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাকে আটকে রাখে। এতে ইউপি সদস্য সোহেল খান প্রতিবাদ করলে তাপসের লোকজন তাকে মারধর করে। ওই সময় তাপসের লোকজন দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে পরিষদ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ১০ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে সোহেল খান (৩৫), রাহাত মোল্লা (২৫), সজিব (২০), সাব্বির (২২), আল আমিন (২৮) ও কামরুল (৩৫) আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ইউপি সদস্য সোহেল খান ও রাহাত মোল্লাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। অপর আহতদের আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই দিন বিকেলে আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও সহকারী পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ইউপি সদস্য ফিরোজ খান তাপসের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল নেতাকর্মী এসে ইউপি চেয়ারম্যানকে পরিষদ থেকে হেঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে ইউপি সদস্য সোহেল খানকে তারা মারধর করেন। এ সময় তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা বলেন, ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ইউপি সদস্য ফিরোজ খান তাপস তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গত ১৯ জুন আমাকে অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক ২১ দিনের একটি দায়িত্বপত্রে স্বাক্ষর নেয়। রবিবার আমি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করলে তাপস তার অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সেবা নিতে আসা নারী ও পুরুষেরা মানবঢাল তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন। নইলে ওরা আমাকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলত। তিনি আরও বলেন, এ সময় তাপস ও তার লোকজন দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ লুনা বিনতে হক বলেন, আহত দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা দুইজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছেন। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) মোঃ তারিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই স্থানে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, নৌবাহিনী দুইজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইমরান