
ছবি: জনকণ্ঠ
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গোমতী নদীর উপর নির্মিত কালিকাপুর সেতু আজ এক ভয়াবহ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত এই স্টিলের সেতুটি এখন ভাঙাচোরা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অথচ প্রতিদিনই এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, এমনকি ভারী মালবাহী ট্রাক পর্যন্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পারাপার করছে।
সেতুর নিচে গোমতী, ওপরে মৃত্যুর আশঙ্কা
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশে বড় বড় ফাটল, স্টিলের অনেক প্লেট খুলে গেছে, কোথাও নট বল্টু নেই, কোথাও ভয়ংকর শব্দ হচ্ছে চলাচলের সময়। মনে হয়, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়বে পুরো সেতুটি। স্থানীয় পথচারী থেকে শুরু করে চালক পর্যন্ত সবাই আতঙ্কে থাকেন সেতু পার হওয়ার সময়।
সিএনজিচালক মনির হোসেন বলেন, “প্রতিদিন ৫০০-এর বেশি গাড়ি এই সেতু দিয়ে যায়। অনেকবার ভারী ট্রাক চালকদের নিষেধ করেছি, কিন্তু কেউ শোনে না। কিছু প্রভাবশালী লোক গায়ের জোরে সেতু ব্যবহার করে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
নির্মাণের ৩০ বছরেও হয়নি কোনো সংস্কার
জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. বাবুল মিয়া বলেন, “এই সেতু নির্মাণ করেছিলেন দেবীদ্বারের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। তখন বলা হয়েছিল শুধুমাত্র হালকা যান চলাচলের জন্য এটি ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এর পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এই সেতু সংস্কার করেনি, এমনকি একটা নটও টাইট দেয়নি।”
তিনি জানান, দেবীদ্বারের উত্তরাঞ্চল এবং ব্রাহ্মণপাড়ার দক্ষিণাংশের মধ্যে এই সেতুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ মাধ্যম। প্রতিদিন এই পথে বিশাল সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করে।
প্রবাসী, ডাক্তার, সাধারণ মানুষ সবাই আতঙ্কে
স্থানীয় প্রবাসী মো. জালাল বলেন, “এই সেতু আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি ভেঙে পড়লে গোটা এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কেউ এর যত্ন নেয় না।”
ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “এই সেতুর উপর দিয়েই ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে। অতি দ্রুত সংস্কার না হলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।”
প্রশাসন বলছে, তদন্ত চলছে
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সেতুটির বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শহীদ