
ছবি:সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি একে বলেছেন, “একটি সস্তা ধরনের গণহত্যা”— এমন এক নিষ্ঠুর নীতি, যেখানে মানুষকে বেছে নিতে বলা হচ্ছে—“ক্ষুধায় মরবে, না গুলিতে”।
খামেনেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, “এক জাতি আগে মরেছিল বোমায়, যেগুলোর দাম লাখো ডলার, আর এখন তারা মরছে খাবারের লাইনে, কয়েক ডলারের গুলিতে।” তাঁর কথায়, এই পরিস্থিতি শুধু অমানবিক নয়, বরং ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনার ফসল, যার পেছনে রয়েছে পশ্চিমা শক্তির সহায়তা।
গাজার বাস্তবতা: খাবার চাইতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ যাচ্ছে
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গত ছয় সপ্তাহেই প্রায় ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছেন শুধুমাত্র ত্রাণ নেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে। শিশুরা, নারীরা, বয়স্ক মানুষ— সবাই লাইন দিচ্ছে খাবারের জন্য। কিন্তু সেই লাইনের শেষটা কোথায়, কেউ জানে না— হতে পারে সেটা হাসপাতালে, অথবা কবরস্থানে।
গণনা নয়, প্রতিটি মৃত্যু এক পৃথিবী হারানোর মতো
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন— বেশিরভাগই নিরীহ সাধারণ মানুষ। প্রতিটি মৃত্যু শুধু একটি সংখ্যা নয়— তা একেকটি পরিবারের শেষ আশাটুকু নিভে যাওয়া।
ইসরায়েলের অবস্থান: শান্তি চাইলে আগে নিঃশস্ত্র হতে হবে হামাসকে
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যদি নিজে থেকে অস্ত্র না ফেলে, তাহলে তাদের সামরিকভাবে নিরস্ত্র করতেই হবে। তিনি শান্তি চান, তবে শর্তসাপেক্ষে— “নিরাপত্তাহীনতা থাকলে শান্তি অসম্ভব।”
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের এক পক্ষ দাবি করেছে, ইসরায়েলের প্রতিনিধি দল ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তি বিলম্ব করছে, যাতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়। তাঁদের ভাষায়, “এটা শুধু যুদ্ধ নয়, আমাদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা।”
আন্তর্জাতিক ত্রাণব্যবস্থা কি সত্যিই কাজ করছে?
বর্তমানে গাজার ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে এক মার্কিন-সমর্থিত সংস্থা, ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)’। এই সংস্থা জাতিসংঘের সাধারণ ব্যবস্থার বাইরেই কাজ করছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, আগের ত্রাণের একাংশ হামাস ছিনিয়ে নিচ্ছিল, যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই যুদ্ধের শেষ কোথায়?
অক্টোবর ৭, ২০২৩-এ হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যেখানে ১,২১৯ ইসরায়েলি প্রাণ হারান। এখনও অন্তত ৪৯ জন জিম্মি, যাদের মধ্যে ২৭ জন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন।
এই সবকিছু মিলিয়ে একটি প্রশ্ন এখন সামনে উঠে আসছে— এই যুদ্ধ কী আর কেবল অস্ত্রের, না এখন তা হয়ে উঠেছে ক্ষুধা, দুঃখ আর মর্যাদাহীনতার বিরুদ্ধে এক লড়াই?
মারিয়া