ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

১৫ মাসে প্রাণ হারিয়েছে ১৮ শিশু

নড়াইলে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা,নড়াইল

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ১৩ জুলাই ২০২৫

নড়াইলে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

নড়াইল জেলায় শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত ১৫ মাসে জেলায় ১৮ জন শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে চলতি জুন মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটেছে পুকুর, ডোবা বা নদীতে সাঁতার না জানার কারণে এবং অভিভাবকদের অসতর্কতার ফলে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে-১৮ জুন, সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের বেদভিটা গ্রামে নতুন খনন করা পুকুরে গোসল করতে নেমে প্রাণ হারায় একই পরিবারের আফিয়া (১০) ও মিম (৮)। দু’জনেই বাড়ির পাশে পুকুরে গোপনে যায় এবং দীর্ঘক্ষণ নিখোঁজ থাকার পর ডোবায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

একইভাবে ৪ জুন কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে চাচাতো ভাই রাহাদ ও রিহান (দু’জনেরই বয়স ২২ মাস) অভিভাবকদের অজান্তে পুকুরে পড়ে মারা যায়। শুধু জুন মাসেই নয়, এ বছর মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ১ এপ্রিল জয়পুরে ফাতেমা (৭), ১১ মে নাকশিতে রায়হান (১৮), ১৪ মে বরাশোলায় রাজ শেখ (১১), ২৬ জুন উজিরপুরে আসমাউল (১৪), ১২ জুলাই খাশিয়ালে সাকিব (৫) ও মানিক (৪), এবং ৯ জুলাই কাশিপুরের প্রিয়া খানম (১৩) — এদের সবার মৃত্যু পানিতে ডুবে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের এ মৃত্যুর জন্য বড় দায় পরিবারের অসতর্কতা এবং শিশুদের সাঁতার না জানা। ছোট শিশুদের কোনো ধরনের নজরদারি ছাড়া বাড়ির আশপাশের পুকুর, ডোবা বা নদীর আশেপাশে চলাফেরা করতে দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অধ্যক্ষ ও সমাজবিজ্ঞানী মোঃ মনির মল্লিক বলেন, “পরিবারের সচেতনতার ঘাটতিই এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ। পাশাপাশি শহরের পুকুরগুলো ভরাট হওয়ায় শিশুদের সাঁতার শেখার সুযোগও কমে যাচ্ছে।” তিনি শহরাঞ্চলে নিয়মিত সাঁতার প্রশিক্ষণ চালুর সুপারিশ করেন।


জেলা ক্রীড়া অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান জানান, প্রতিবছর মে মাসে সরকারিভাবে মাসব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। চলতি বছর ৮০ জনের বেশি শিশু-কিশোরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও প্রতি সপ্তাহে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করছেন কালিদাস ট্যাংক পুকুরে। তিনি আরও বলেন, “সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকদের সম্মানীসহ স্থায়ী ব্যবস্থাপনা দরকার।” জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, “সাঁতার শেখা প্রতিটি শিশুর জন্য অপরিহার্য। জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। আমরা দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা ক্রীড়া অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করবো।” তিনি অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান সাঁতার না জানিয়ে কোনো শিশুকে পুকুর বা জলাধারের পাশে একা না যেতে দেয়ার জন্য। একইসঙ্গে তিনি গ্রামীণ অঞ্চলে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও জোর দেন।

সাব্বির

×