ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

আজ ফলাফল, আজই ফাঁসির চিন্তা, একটা ভাঙা কিশোরের দিনলিপি! 

কে.এম. মুরাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:০৯, ১১ জুলাই ২০২৫

আজ ফলাফল, আজই ফাঁসির চিন্তা, একটা ভাঙা কিশোরের দিনলিপি! 

হতভাগাটার নাম মুরাদ!
বয়স আমার ১৬.
আজ দুপুর ২টায় এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশ হলো। চোখের সামনে নিজের রোল-রেজিস্ট্রেশন টাইপ করে যখন ফলাফল দেখলাম, তখন মাথা নিচু হয়ে গেল। দুইটা সাবজেক্টে “F”।

একটা শব্দ, একটা অক্ষর—যেটা আমার বুকের ভেতর সব গর্ব চুরমার করে দিল। তখন আমি চুপ করে বসে ছিলাম। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেনি, কিন্তু আমি যেন চারপাশের কথাগুলো কানে শুনতে পাচ্ছিলাম—
“দুইটা সাবজেক্টে ফেল?”
“এই ছেলে তো বরবাদ!”
“দেখেছিস রেজাল্ট? পরিবারটার মুখ থাকবে কোথায়?”

আমার শরীরটা তখন জ্বলছিল না, বরং বরফ হয়ে গিয়েছিল। ঠান্ডা, নিঃশব্দ, অনুভূতিহীন। একসময় ঘরে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। ফোন চুপ করে বিছানায় ছুঁড়ে দিলাম। তারপর একটা কাপড় হাতে নিয়ে পাখার দিকে তাকিয়ে রইলাম। হ্যাঁ, আমি আজ ফাঁসিতে ঝুলে পড়তে চেয়েছিলাম। এটা আর ভাবনা ছিল না, এটা ছিল সিদ্ধান্ত। মনে হচ্ছিল, এই জীবন আমার প্রাপ্য না। এই ব্যর্থতা নিয়ে আর কাউকে মুখ দেখিয়ে বাঁচার সাহস নেই।

তবে জানি না কেন, কোনো এক ভেতরের ভয় কিংবা শেষ মুহূর্তের বিরতি—আমাকে থামিয়ে দিল। হয়তো একটা ক্ষীণ আশা রয়ে গেছে বেঁচে থাকার, অথবা কেউ একজনের চোখে নিজের ভাঙা চেহারাটা দেখার ইচ্ছা। কিন্তু সেই মুহূর্তটা আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না।

আজ আমার কাছে প্রশ্ন—এই সমাজ কি বোঝে, একটা ফেল করা ছেলের মনের ভিতর কী চলে? এই যে আমি, চুপ করে বসে আছি, কারও চোখে আমি কি আর কিছু? আমি কি শুধুই একটা ‘ব্যর্থ’ নম্বর? আমার লজ্জা কি এতটাই বড় যে আমি বাঁচার যোগ্য না?

আমি চেয়েছিলাম কেউ বলুক, “দুইটা সাবজেক্টে ফেল করছিস, কিন্তু সেটা দিয়ে তুই মাপা যাবি না।”
আমি চেয়েছিলাম কেউ জিজ্ঞেস করুক, “তুই কেমন আছিস?” এই সমাজের উচিত, শুধু রেজাল্ট না দেখে মানুষটাকে দেখা। যারা ফেল করে তারা হারিয়ে যেতে চায় না, তারা শুধু একটু সাহচর্য, একটু ভালোবাসা চায়।

আমার মতো আরও অনেকেই আছে—আজ রেজাল্ট পেয়ে চুপ হয়ে গেছে। হয়তো কেউ জানে না, সে রাতেই তারা কী ভাবছে। কেউ হয়তো কাপড় হাতে নিয়ে পাখার দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ হয়তো ছাদে উঠে দাঁড়িয়েছে, কেউ শুধু দরজার আড়ালে চুপচাপ কাঁদছে।

এই লেখাটা তাদের জন্য, যারা আজ ভেঙে গেছে, কিন্তু চায় কেউ তাকে ধরে রাখুক। 

ফেল মানেই শেষ নয়।
আর কেউ যদি পাশে না দাঁড়ায়, সেটা তার ব্যর্থতা not mine.

আঁখি

×