
গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে পাঁচটি সমন্বয় ও তদারকি কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এটা নিঃসন্দেহে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি। নির্বাচন সুষ্ঠু করার উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পদায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে আট লাখের মতো সদস্য মাঠে থাকবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া একটা সময়সাপেক্ষ ও বিরাট কাজ। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল- যে সময়েই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের সেই প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
নির্বাচনমুখী গণতন্ত্রকামী মানুষ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের স্বপ্ন দেখছেন। অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা প্রত্যাশিত গন্তব্য পাক, এমনটিই চাইছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাই ব্যবধান, সংশয়, সংকট, এ জাতীয় সব নেতিবাচকতাকে পেছনে ঠেলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের খোলাখুলি বৈঠক কাক্সিক্ষত ছিল। লন্ডন বৈঠক সুসম্পন্ন এবং যৌথ বিবৃতির কারণে জাতি সুস্পষ্ট ইতিবাচক বার্তা পেয়েছে ইতোমধ্যেই।
নির্বাচন কমিশনের মূল অঙ্গীকার হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করা। এই লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে যেসব বাধা আসতে পারে তার অন্যতম হচ্ছে সরকারের কোনো সংস্থা যাতে হয়রানিমূলক মামলা না করে। সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা অর্থ ও পেশিশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এ ধরনের ১৪টি বাধা চিহ্নিত করে কীভাবে তা মোকাবিলা করা হবে, নিজেরাই সেই কর্মপরিকল্পনা কয়েক বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটাররা আশা করেন, সব বাধা অপসারণ হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারের যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তেমনি দায় ও অঙ্গীকার রয়েছে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের। মনে রাখতে হবে বহু বছর পর দেশের নাগরিকদের সামনে সুযোগ আসছে সম্পূর্ণ নিজের পছন্দে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের। তাই আশা করা যায়, এবারের ভোট সত্যিকারার্থেই হয়ে উঠবে আনন্দপূর্ণ এক উৎসব।
গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হবে, দেশবাসী এমনটাই আশা করে। নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রশাসনিক দিক নিয়েই ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের সব অংশীজনকেই এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা চাই। স্বয়ং সরকারপ্রধান যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন, তখন নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ফেব্রুয়ারি না এপ্রিল- এমন ধোঁয়াশা থাকা আর বাঞ্ছনীয় হতে পারে না।
প্যানেল/মো.