
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই কমেছে। দেশের ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায় পরীক্ষায় পাসের হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বোর্ড। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায়ও গতবারের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। তবে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল শাখায় পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো এবার ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। আর বিভাগগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৮৪টি। অন্যদিকে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৪টি, যা গত বছর ছিল মাত্র ৫১টি।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় ১৯ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ এবং ফেল করেছে ৬ লাখ। বিশেষ করে গণিতের ফলে রীতিমতো বিপর্যয় ঘটেছে। অনেক বোর্ডে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। ফলে এবার পরীক্ষার্থীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের প্রতিভা ও মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের প্রভাব এবারের ফলে পড়েছে। এছাড়া অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনস্তাস্তিক ট্রমা এবং আগের মতো রাজনৈতিক কারণে ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ ফল না দেখানোর প্রভাবও পড়েছে। বরবার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ চাপ থাকত। কিন্ত এবার সেটা ছিল না। এবারের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়ন অনেকটা নিরপেক্ষ ছিল। ফলে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ কম হলেও সেটি গুণগত শিক্ষার জন্য ইতিবাচক। বহু বছর পর এবারই বাস্তবসম্মত ফলাফল পেলাম আমরা। আশা করা যায় এমন ফল প্রকাশে আগামীতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি পড়ার টেবিলমুখী হবে। অবশ্য এমন বাস্তবতা শতভাগ আনন্দদায়ক নয়। তারপরও শিক্ষার মান বজায় রাখতে এমন তা মেনে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ওভার মার্কিং ও আন্ডার মার্কিং না করে যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমলেও প্রকৃত পাসের হার পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি বিপুল বিনিয়োগও করে থাকেন। ফলে লাখ লাখ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের পরিবারগুলোয় কিছুটা হলেও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাই এবার কেন এমনটি হলো সে বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনুসন্ধান করা জরুরি। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবে- এজন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
প্যানেল/মো.