ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধই একমাত্র পথ

মোঃ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্

প্রকাশিত: ২০:০০, ৩ জুলাই ২০২৫

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধই একমাত্র পথ

ছবি: সংগৃহীত

মাদকদ্রব্য ও নেশা বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো সংকট নয়, তবে ২০২৫ সালে এর বিস্তার ও ভয়াবহতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাম্প্রতিক সরকারি জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। এই বাস্তবতায়, আমাদের মাদকবিরোধী লড়াই কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না; বরং পুরো সমাজকে সম্পৃক্ত করে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। 

বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে মাঝে মাঝে বড় ধরনের অভিযান চলে, কিছু মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়, কিছু মাদক উদ্ধার হয়। কিন্তু মূল সিন্ডিকেট ও গডফাদাররা প্রায়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সীমান্তের দুর্বলতা, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এই চক্রকে টিকিয়ে রেখেছে। শুধু পুনর্বাসন কেন্দ্র বাড়িয়ে বা নতুন আইন করে সমস্যার শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে না। বরং, মাদক ব্যবসার মূল অর্থনৈতিক উৎসগুলো খুঁজে বের করে সেখানে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ সৃষ্টির পথ বন্ধ না করলে মাদকের প্রবাহ থামবে না। 

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা, বেকারত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। অনেক তরুণ মানসিক অবসাদ থেকে রেহায় পাবার জন্য মাদককে সহজ পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এখানে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। শুধু শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং তরুণদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। স্কুল-কলেজে মাদকবিরোধী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এসব উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। 

প্রায়ই শোনা যায়, মাদকবিরোধী অভিযানে নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়, আবার প্রকৃত অপরাধী থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই চিত্র বদলাতে হলে, পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা ও নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাদকবিরোধী কমিটি গঠন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ও নিয়মিত কমিউনিটি বৈঠক আয়োজন করতে হবে। এতে শুধু অপরাধ দমন নয়, সমাজে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। 

মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। সীমান্তে স্মার্ট নজরদারি, ড্রোন ও আধুনিক স্ক্যানার ব্যবহার করা যেতে পারে। মাদক ব্যবসার আর্থিক লেনদেন ট্র্যাক করতে ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর কড়া নজরদারি জরুরি। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা অপরিহার্য। 

সবশেষে, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেতে হলে, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের আশার আলো দেখাতে হবে, পরিবারকে সচেতন করতে হবে, প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—এখানে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।

লেখকঃ মোঃ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সাব্বির

×