ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাণিজ্য চাপে আবাসিক এলাকা

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১ জুলাই ২০২৫

বাণিজ্য চাপে আবাসিক এলাকা

ঢাকার কিছু আবাসিক এলাকায় এত বেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যে, আবাসিক এলাকা তার বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা হারিয়েছে। রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় তৎপরতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এক দশক আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচকতা লক্ষ্য করেনি ঢাকাবাসী। রাজধানীর আবাসিক এলাকায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঢালাওভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার নিরসন জরুরি। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিশেষ অভিযান পরিচালনা জোরদার করুক- এমনটা প্রত্যাশিত ছিল। সেটি হয়নি। রাজধানীর ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার আবাসিক বৈশিষ্ট্য ও রূপ অক্ষুণ্ন রাখতে সরকারের ওপর মহল ছাড়াও ২০১২ সালে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও রাজউকের ব্যর্থতার কারণে শুধু ধানমণ্ডি নয়, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ সব আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাই এসব এলাকায় নবাগত লোকদের মনে দ্বন্দ্ব জাগতেই পারে- এলাকাগুলো আবাসিক নাকি বাণিজ্যিক!
ধানমণ্ডির মতো বৃহত্তম আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সবই লাগবে। তবে পরিমিত মাত্রায়। সব হতে হবে প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশবান্ধব। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না। ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা তার চরিত্র বহু বছর আগেই হারিয়েছে। এখানে যে ভবনগুলোতে হাসপাতাল চালু রয়েছে, সেগুলো মূলত আবাসিক ভবন। ধানমণ্ডির স্থায়ী বাসিন্দাদের এমনটাই অভিমত। লালমাটিয়ার আবাসিক ভবনগুলোতে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে এক সময়ের নিরিবিলি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত লালমাটিয়ায় এখন যানবাহনে গিজগিজ করে। এ দুই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নান্দনিক লেক, খেলার মাঠ ও প্রশস্ত রাস্তা। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দাপটে এ দুই আবাসিক এলাকার যে সুনাম, তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিকীকরণ ঠেকাতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারা কী ভূমিকা রেখেছে?
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আবাসিক এলাকার প্লটগুলোতে নির্দিষ্ট কার্যক্রমের বাইরে বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৩ খসড়ায় বলা আছে, কোনো ইমারত/স্থাপনা বসবাস বা ব্যবহারের সনদপত্রে উল্লিখিত ব্যবহারের উদ্দেশ্যবহির্ভূত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। অন্যথায় ইমারত নির্মাণ আইন ও অন্যান্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ইতোমধ্যে ৩ হাজার ১৯২টি অবৈধ ভবন চিহ্নিত করেছে। এই অবৈধ ভবনগুলোর উচ্ছেদ কার্যক্রম রাজউক কবে শুরু করতে পারবে? জনমনে প্রশ্ন, দশকের পর দশক ধরে এমন সব অপকর্ম কীভাবে বিস্তার লাভ করল?

প্যানেল

×