
ছবিঃ সংগৃহীত
একসময় তরুণ-তরুণীদের প্রধান চিন্তা ছিল পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, আত্মউন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন অনেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকছে রিলস বানানো, ভিডিও এডিটিং কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়ানো নিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন—ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব শর্টস—তরুণদের মনে জন্ম দিয়েছে এক ধরনের কৃত্রিম "তারকাখ্যাতি"র মোহ। কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওতে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, লাইক-কমেন্টের নেশা বা মনিটাইজেশনের আশায় তারা দিনদিন গা ভাসিয়ে দিচ্ছে এই ভার্চুয়াল বাস্তবতায়।
পরিবার ও সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাওয়া
এই অন্ধ মোহে অনেক তরুণ-তরুণী পরিবার, শিক্ষা, কর্মজীবন এমনকি ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিক থেকেও উদাসীন হয়ে পড়ছে। সকাল-বিকেল ভিডিও কনসেপ্ট বানানো, লোকেশন খোঁজা, ক্যামেরা সেটআপ, শুটিং, এডিটিং—এই প্রক্রিয়ায় চলে যায় দিনের বড় একটা সময়। অভিভাবকরা যখন সন্তানদের হাতে বইয়ের বদলে সারাক্ষণ ফোন দেখেন, তখন উদ্বিগ্ন হতেই হয়।
আর্থিক মোহ বনাম বাস্তবতা
যদিও সত্য যে কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর এই প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ভালো অর্থ উপার্জন করছে, তবে সংখ্যাটি নিতান্তই কম। অধিকাংশই ইনকামের মুখ না দেখেই বছরের পর বছর শুধু সময় ও শক্তি ব্যয় করছে। ফলাফল—নেই টেকসই দক্ষতা, নেই শিক্ষাগত অগ্রগতি, নেই মানসিক পরিপক্বতা।
সামাজিক চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি
রিলসের মাধ্যমে নিজেকে "ভালোভাবে উপস্থাপন" করার চাপ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা। অন্যের লাইফস্টাইল দেখে হীনম্মন্যতা, নিজেকে কম বোঝার প্রবণতা ও কৃত্রিম পারফেকশনিজম অনেকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। এতে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সমাধান কোথায়?
-
সোশ্যাল মিডিয়া একদম পরিত্যাগ নয়, বরং সচেতনভাবে ব্যবহার করা জরুরি।
-
তরুণদের উচিত ভারসাম্য রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দেওয়া।
-
পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই বিষয়ে সজাগ থেকে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
-
কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উচিত বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
শেষ কথা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে পারে জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও অভিব্যক্তির শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম—যদি তা ব্যবহার হয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। রিলস বানানো খারাপ নয়, তবে সেটি যদি জীবনের ভারসাম্য, ভবিষ্যৎ ও সম্পর্ক ধ্বংস করে দেয়—তাহলে তা ভয়ানক বিপর্যয়ের রূপ নিতে পারে।
আসুন, ভার্চুয়াল মোহ নয়—বাস্তব জীবনকেই গুরুত্ব দিই।
লেখক:
তানজিল জামান জয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কলাপাড়া, পটুয়াখালী
ইমরান