
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব দুর্বল ও দেশের সামরিক বাহিনীকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত হয় ইতিহাসের নারকীয়, নির্মম হত্যাযজ্ঞ। বিডিআর বিদ্রোহের এ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরণ আইনে করা মামলায় ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরও অন্তত ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
সশস্ত্র বিদ্রোহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হয়ে থাকে, এর আগে বাংলাদেশেও হয়েছে, ১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহ অন্যতম। কিন্তু কোথাও কখনো, কোন সশস্ত্র বিদ্রোহের পেছনে শুধু দাবি-দাওয়া কিংবা ভাগবাটোয়ারার বিষয় মুখ্য ছিল না। এ হত্যাকাণ্ড ছিল একাত্তরের পর দেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র। এ নারকীয় ঘটনার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সেদিন শুধু চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
দেশি-বিদেশি জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের আলোকে নির্দিধায় বলা যায়, ‘পিলখানার নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য উপমহাদেশের মাফিয়া দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষক ভারতের বিরুদ্ধেও অভিযোগের তীর রয়েছে। এ দায় তারাও এড়াতে পারে না।
দেশের জনগন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কুশীলব হিসেবে জানে, আওয়ামী লীগ এমপি মির্জা আজম, হাজী সেলিম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ফজলে নূর তাপস এবং মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। তারা ওই সময়ে কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন। জানা যায়, বিডিআর জওয়ান তোরাব আলী তাপস, নানক, আজম ও সোহেল তাজের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন।
২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়া। ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কুশীলব কারা ছিল জাতি আজও জানতে পারেনি। তাদেরকে কেনইবা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি আওয়ামী লীগ। পিলখানা হত্যাকাণ্ড এক দিনের পরিকল্পনায় হয়নি, অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পানা নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মনে করেন, পিলখানার ঘটনা,
১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে।
দেশের আম জনতার মনে আজও একটি প্রশ্ন সদা ঘুরপাক খাচ্ছে! ঠিক কি কারণে এই বিডিআর বিদ্রোহ হয়েছিল? নিশ্চয়ই আমাদের স্মরণে আছে, ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারি সীমান্তে বিডিআর বিএসএফের মুখোমুখি যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ জোয়ান নিহত হয়। এর আগে পদুয়ায় ১৫ জন বিএসএফ নিহত হয়।
এ ঘটনার পর ভারতের ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান দেন এ ঘটনার বদলা নেওয়া হবে। দেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রত্যক্ষ মদদে এবং তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মঈন ইউ আহমেদের পরোক্ষ সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়, যার কারণে, নিহত সেনা অফিসারদের জানাজা পড়তে গেলে কয়েকজন অফিসার জেনারেল মঈনকে মারতে আসে।
এছাড়া বড়ইবাড়ি সীমান্তে বিএসএফ ও তৎকালীন বিডিআরের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল। সবগুলোই ছিল বিএসএফের পরিকল্পিত ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যার জন্য বিডিআরে বদলি করে এনে এক জায়গায় তাদের জড়ো করা হয়। এরপর তাদের হত্যা করা হয়। পদুয়া এবং রৌমারীর যুদ্ধে বিএসএফ হত্যার পর থেকেই বিডিআর ধ্বংসে নিয়োজিত হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। রৌমারীর ঘটনার নেতৃত্ব দেন রংপুরের তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার পরবর্তী সময়ে বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।
বিএসএফ শোচনীয় পরাজয়ের কারণে তারা ক্ষুব্ধ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এমনটাই বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণ।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এটি শুধুই ব্যর্থতা নাকি ষড়যন্ত্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এটা তো হঠাৎ করে ঘটেনি বা আকস্মিক পরিকল্পনার অংশ নয়। দীর্ঘদিন ধরে এটা নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছে। গোয়েন্দারা কেন বিষয়টি জানতে পারেননি, নাকি তারাও জড়িত। কিন্তু আরও তো গোয়েন্দা সংস্থা ছিল, তাহলে তারা কী করেছে? এটা কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়াতেও জানা গেল না। নেপথ্যে থেকে কারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাদের পরিচয় অজানাই থেকে গেল। এটি ভবিষ্যতের ষড়যন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পিলখানার সিসি টিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করে দেন ঘটনার পরপর দায়িত্ব পাওয়া বিডিআর ডিজি লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। ঢাকায় আনা হয়েছিল প্রশিক্ষিত কিলার বাহিনী। একটি অংশকে খেলোয়াড় বেশে বিডিআরের পিকআপ ভ্যানে করে, আরেকটি অংশকে রোগী সাজিয়ে নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে পিলখানায় ঢোকানো হয়। অপারেশন শেষে, রাতে অ্যাম্বুলেন্সে নিরাপদে তারা পিলখানা ত্যাগ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা ভারতীয় কিলার গ্রুপটিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। ভারতীয় কিলার গ্রুপের জন্য ফ্লাইটটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে।
পিলখানা হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন ও কিলার গ্রুপের সদস্যরা এ অপারেশন চালাতে ফার্মগেটে অবস্থিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে চালানো হলেও এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেনাপ্রধান হিসেবে বিডিআর হত্যা মোকাবিলা তথা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিরোধিতার মুখে পড়ে। এর কারণ বিডিআরের কথিত বিদ্রোহের আড়ালে সেনা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী সুনিতা পাল প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখেছিলেন। সুনিতা পালের অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলোর নিখুঁত বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ ক’জন রাঘব-বোয়াল’ সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে চাকরিরত কারো কারো ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ধরিয়ে দিয়েছেন তথ্যসূত্রও। দিন-তারিখ ও সময় ধরে ধরেই এসব তথ্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে চলেছেন তিনি। ইন্টারনেটের কল্যাণে তার রিপোর্টগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়ায় সারাবিশ্বের মানুষের কাছেই মুহূর্তে পৌঁছে যায়।
সুনিতা পালের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি, সে সময়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সুনিতা পালকে আর্থিক সুবিধার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল অনৈতিক পন্থায় সমঝোতা করার জন্য। এ কথাটা সুনিতা পাল নিজেই জানিয়েছে তার ওয়েবসাইটে। সুনিতা পালের ৩০টি প্রশ্ন আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে নতুন করে।
১. ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি গোয়েন্দা তথ্য পাঠানো হয়েছিল?
২. বিডিআরের নিহত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ কি কথা হয়েছিল?
৩. প্রধানমন্ত্রী কেন ২৬ ফেব্রুয়ারির ডিনারে যেতে অস্বীকার করেছিলেন?
৪. ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি কার নির্দেশে বিডিআর হেডকোয়ার্টারের আশপাশের লোকজনকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছিল?
৫. ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কেন লে. কর্নেল মুকিত বিডিআর সদর দপ্তর থেকে সেনাবাহিনী এবং বিডিআর মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছিলেন?
৬. বিডিআর সদর দপ্তরের ৫ নম্বর গেটে সেদিন কেন পুলিশ এবং র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়নি?
৭. প্রধানমন্ত্রী কেন ঘটনা জানার ৪ ঘণ্টা পর নানক এবং মির্জা আজমকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন?
৮. বিডিআর বিদ্রোহীদের যে প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তাদের নাম-ঠিকানা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢোকার সময় কেন রেজিস্ট্রী করা হয়নি?
৯. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিদ্রোহীদের নেতা ডিএডি তৌহিদ জানিয়েছিলেন বিডিআর ডিজিসহ কয়েকজন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে-এ বিষয়টি কেন ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত গোপন করা হলো?
১০. বাংলাদেশ টেলিভিশন সেদিন বিদ্রোহের ঘটনা কেন প্রচার করেনি?
১১. বিদ্রোহীরা কেন প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের নেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিল?
১২. কিছু বিদ্রোহী কেন আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছিল?
১৩. ঘটনার সময় বিডিআর হেডকোয়ার্টারে দেশের বাইরে থেকে একাধিক ফোন কল এসেছিল। তদন্তকারীরা কি এগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন?
১৪. প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন পালিয়ে যাওয়া কিছু বিদ্রোহীর সঙ্গে দেখা করতে দুবাই এসেছিলেন?
১৫. জয় দুবাই এয়ারপোর্টে কেন পালিয়ে যাওয়া বিদ্রোহীদের হাতে একটি করে ইনভেলপ দিয়েছিলেন?
১৬. আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জয় কেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে বিদ্রোহের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করলেন?
১৭. তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জয়কে কেন তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করেছেন?
১৮. সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি কেন নির্দিষ্ট একটি দেশের সরকারের কাছে, ফোন করে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ ঠেকাতে সাহায্য চান?
১৯. আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দীন খান আলমগীর কেন ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন?
২০. মন্ত্রী ফারুক খান কেন বললেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং র্যাব ফোর্সের মধ্যে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে?
২১. সরকার কেন পুলিশের আইজিকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে?
২২. কারণ ছাড়াই কেন নবনিযুক্ত ঢাকার পুলিশ কমিশনার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুুলে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন?
২৩. প্রধানমন্ত্রী বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে অভিযান চালাতে দিলেন না?
২৪. তথ্য সংগ্রহের নামে সিআইডি দল বিডিআর সদর দপ্তর থেকে কি সরিয়েছে?
২৫. বিডিআর সদর দপ্তরে পাহারারত পুলিশ সদস্যরা ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কি ধরনের তথ্য-প্রমাণাদি সেখান থেকে সরিয়েছে?
২৬. ২৬ মার্চ আত্মসমর্পণের পর রাতের অন্ধকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য নেতা কেন বিডিআর সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন?
২৭. ঘটনার পর থেকে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদার কেন লুকিয়ে ছিলেন?
২৮. আওয়ামী লীগ এবং এর নেতারা কেন হত্যাকারী এবং তাদের সহযোগীদের বিচার সামরিক আদালতের পরিবর্তে বেসামরিক আদালতে দাবি করছেন?
২৯. আওয়ামীপন্থি একদল সাংবাদিক কেন অব্যাহতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং বেসামরিক আদালতে বিচার দাবি করছেন?
৩০. ভারতীয় গণমাধ্যমে যে ধরনের বক্তব্য আসছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের কণ্ঠে কেন একই ধরনের বক্তব্য?
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ তার ইউটিউব চ্যানেলে ২৯ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দেন। তিনি সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল জিএসপিসি মিটিং। এই মিটিংয়ের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় আগামী বছরে কী কী জিনিস প্রকিউর করবে। আমি জিএসপিসি মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আনুমানিক সকাল পৌনে ৯টায় সিজিএস লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিনা ইবনে জামালী আমার অফিসে আসেন এবং বলেন, আমাদের কাছে কিছু ৮১ মিলিমিটার মর্টার আছে, যেটা সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না। এটার গুদামজাত ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিডিআর ৮১ মিলিমিটার মর্টার ব্যবহার করে তারা যদি হেড ট্রান্সফার করে নিয়ে যায়, আমাদের অনেক উপকার হবে।’ তিনি জানান, সে ব্যাপারে বাহিনীটির তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের (হত্যাকাণ্ডে নিহত) সঙ্গে সকালে তার কথা হয়। শাকিল অস্ত্রগুলো নিতে রাজি হন।
‘কথোপকথনে মনে হয়েছে, তখন পর্যন্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি (বিডিআরের ডিজি) কিছুই জানতেন না বলেই আমার বিশ্বাস। যদি জানতেন, নিশ্চিয়ই তিনি আমাকে অবহিত করতেন।’ সাবেক এই সেনা প্রধান বলেন, জিএসপিসি মিটিং চলাকালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ সভাকক্ষে প্রবেশ করেন এবং আমার কানে কানে বলেন, পিলখানায় গণ্ডগোল হচ্ছে। আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।
(বাকী অংশ আগামীকাল সমাপ্য)
লেখক : সাংবাদিক
প্যানেল