ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১ জুলাই ২০২৫

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন

পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন, প্রকরণ প্রায় একই রকম, কিন্তু বাংলাদেশে এক ব্যতিক্রম ব্যবসা ‘মামলা বাণিজ্য’। বহুকাল থেকেই এ দেশের জনগণ এই প্রত্যয়টির সঙ্গে সুপরিচিত। অসংখ্য নিরীহ, অসহায় মানুষ সমাজের দুষ্টচক্রের দ্বারা মামলা বাণিজ্যের শিকার হন প্রতিবছর। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি কার্যবিধির একটা সংশোধন আনা হয়েছে। যেখানে ভুয়া ও মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। এতে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য-প্রমাণ না মিললে বিচারকাজ শুরুর আগেই আদালত অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারবেন। খুব চমৎকার উদ্যোগ, দেশের সাধারণ জনগণ উপকৃত হবেন।
সাধারণত আমাদের দেশে দেখতে পাই, কোনো একটি মামলা হয়েছে, সেটি ভুয়া অথবা মামলাটি সঠিক, কিন্তু যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা নির্দোষ, অসংখ্য ব্যক্তির মামলায় নাম দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মামলা বাণিজ্য করা হয়। একটা হত্যা মামলার তদন্তে দুই-চার বছর সময় লাগে। যারা আসামি হন তারা কয়েক বছর ধরে একটা আতঙ্কে থাকেন, কখন গ্রেপ্তার ও মামলা বাণিজ্যের শিকার হবেন। অধিকাংশ হত্যা মামলায় বাণিজ্যের আতঙ্ক থাকে। নাগরিক জীবনে এই উৎকট ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে, পরামর্শ করে সরকার সিআরপিসিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন মামলায় ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে ৯০ জনের বিরুদ্ধে আসলেই কোনো অভিযোগ নেই, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল স্টেজেই ওই মামলা থেকে আসামিদের মুক্ত করে দিতে পারবেন।
আমরা মনে করি, এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে যেসব মামলায় গ্রেপ্তার বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, অসংখ্য লোককে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে, তারা এ জাতীয় ভুয়া মামলা থেকে পরিত্রাণ পাবে। এর অর্থ এই নয় যে, তদন্ত থেমে থাকবে, তদন্ত তার নিজ গতিতেই চলবে।
তদন্তের শেষ ধাপে পুলিশ যদি মনে করে, যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের কারও বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার সময় সেসব ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিতে পারবে। তবে শতর্ক থাকতে হবে, কোনো অসাধু পুলিশ সদস্য যেন অর্থের বিনিময় অপরাধীকে ছেড়ে না দেয়। পুলিশকে সুনিশ্চিত করতে হবে যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। অসাধু তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থাও রাখতে হবে, যার সুফল দেশের নাগারিকগণ ভোগ করবেন।

প্যানেল

×