
সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নতুন টাকা ছাপিয়ে ৫২,৫০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি একদিকে সরকারকে কিছুটা আর্থিক স্বস্তি দিতে পারে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জন্য হতে পারে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিপূর্ণ ট্রিগার।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিপুল অঙ্কের টাকা মূলত উন্নয়ন প্রকল্প, আমদানি দায়, বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য বাজেট ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যয় করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপে, তখন বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়। কিন্তু উৎপাদন না বাড়লে এর ফলে দ্রব্যের চাহিদা ও দামের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই অবস্থাকে চাহিদানির্ভর মূল্যস্ফীতি বলা হয়, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক বলেন,"সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য টাকা ছাপানো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। এটি ভবিষ্যতের উপর বড় বোঝা চাপায়।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার চলমান বৈশ্বিক সংকট ও ডলার ঘাটতির কারণে নিরুপায় হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন:
"আমাদের কাছে সরকারের চাহিদা এসেছে, এবং সেটি পূরণ করা হয়েছে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে।"তবে তিনি স্বীকার করেন, "এই সিদ্ধান্তের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা।"
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর একটি পোস্টে এ তথ্য সামনে আসার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন,“জিনিসের দাম যেখানে আকাশছোঁয়া, সেখানে আরও টাকা ছাপলে কি আমরা বাঁচব, নাকি মরব?
”অন্যজন মন্তব্য করেন,“আমার আয় বাড়ছে না, কিন্তু ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই টাকা ছাপা সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসংবাদ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতেও অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপানোর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এ ধরনের পদক্ষেপে সঞ্চয় কমে, বিনিয়োগে ভাটা পড়ে এবং বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে নতুন টাকা ছাপানোর আগে:
- কর আদায় দক্ষতা বাড়াতে হবে
- কালো টাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে
- উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে
- বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নতুন টাকা ছাপা আপাতভাবে সহজ সমাধান মনে হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। এখন সময় সতর্ক থাকার—কারণ কোনো ভুল সিদ্ধান্ত গোটা অর্থনীতিকে years পিছিয়ে দিতে পারে।
হ্যাপী