ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

স্টিল আমদানি পর্যায়ে ৫% আগাম কর বহাল রাখার দাবি

অর্থনৈতিক  রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২ জুলাই ২০২৫

স্টিল আমদানি পর্যায়ে ৫% আগাম কর বহাল রাখার দাবি

আয়রন ও স্টিল খাতের ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন

সব ধরনের স্টিল আমদানি পর্যায়ে পূর্বের ন্যায় ৫% আগাম কর রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা জানান, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৭.৫% করা হয়েছে যা আয়রন ও স্টিলখাতকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত আগাম কর প্রত্যাহারের দাবি জানান সংগঠনটির সভাপাতি আবুজার গিফারী জুয়েল। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমির হোসেন নূরানী, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নাসিরুল্লাহ প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে আবুজার গিফারী জুয়েল বলেন,
আমরা যে পণ্য আমদানি করে থাকি, তা মূলত সেকেন্ডারি কোয়ালিটি স্টিল। যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের কাঁচামাল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সস্তায় লৌহজাত শিল্পের কাঁচামাল যোগান দেওয়ার জন্য সেকেন্ডারি কোয়ালিটি স্টিল সিট ও কয়েল কাঁচামাল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করে থাকে। আমাদের দেশে লোহার খনি বা আকরিক না থাকায় এ ধরণের কাঁচামালের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ এর ধারা- ৩১ এর উপধারা ২ এ সংশোধনী আনয়ন করা হয়। উক্ত ধারায় আমদানি পর্যায়ে পূর্ববর্তী বাজেটে ৫% হারে আগাম কর বলবৎ ছিল। যা বৃদ্ধি করে ৭.৫% করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত শিল্প ধ্বংসকারী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমদানি পর্যায়ের সকল পণ্যের ক্ষেত্রে ৭.৫% হারে আগাম কর আরোপের ফলে আমাদের আমদানিকৃত সেকেন্ডারি কোয়ালিটি স্টিল ব্যবসা আজ বন্ধের দ্বারপ্রান্তে।

ব্যবসায়িকভাবে আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা অস্তিত সংকটে পড়ব। তাই শিল্পখাত বাঁচাতে বর্ধিত আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে। আমির হোসেন নূরানী বলেন, স্টিল খাত টিকিয়ে রাখতে হলে অগ্রিম কর ও  রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, ভ্যাট আইন সহজ করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের এক টন স্টিল কয়েল/সিটের আনুমানিক ইনভয়েস মূল্য ৫৬০ মার্কিন ডলার, কিন্তু এসেসঅ্যাবল ভ্যালু ৬৮০ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ১২০ মার্কিণ ডলার বেশি মূল্যে শুল্কায়ন। ১৫% হারে ভ্যাট এবং ৫% হারে আগাম কর।

স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ভিত্তি করে আগাম কর নেওয়া হয়। যা মূলত ভ্যাট ব্যবস্থার একটি বিচ্যুতি। স্থানীয় পর্যায়ে ৩৩.৩৪% সংযোজন হলে ১,১৪,০০০ ক্রয়মূল্য হলে স্থানীয় পর্যায়ে ৩৮,০০০/- টাকা সংযোজন করতে হয়। যার ফলে বিক্রয়মূল্য (ভ্যাট ছাড়া) ১,১৪,০০০ + । স্থানীয় পর্যায়ে ৫০% সংযোজন হলে ১,১৪,০০০ ক্রয়মূল্য হলে স্থানীয় পর্যায়ে ৫৭,০০০/- টাকা সংযোজন করতে হয়। যার ফলে বিক্রয়মূল্য ভ্যাট ছাড়া = ১,১৪,০০০ + ৫৭,০০০/- = ১,৭১,০০০/- টাকা। এখানে প্রতি টনে (১,৭১,০০০-১,৫২,০০০) = ১৯,০০০/- টাকা বেড়ে যায়।

স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, যে সকল ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের নিচে হবে সেসব ক্ষেত্রে ব্যাপক ফেরত দাবির উদ্ভব হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমদানিকারকগণ তাদের হিসাবরক্ষণ স্বচ্ছতা অভাবে এই ফেরত থেকে বঞ্চিত হবে। তারা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হবে। রাজস্ব আহরণের নামে, প্রায় চার লক্ষ শ্রমঘন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প-কারখানা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক সহ¯্র্রাধিক ব্যবসায়ী অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।

২৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হারিয়ে যাবে। যার বিরূপ প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়বে। আলহাজ নাসিররুল্লাহ বলেন, আমাদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে, চার লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায়, ২৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান রক্ষায় সেকেন্ডারি কোয়ালিটি স্টিল আমদানি পর্যায়ে পূর্বের ন্যায় ৫% আগাম কর রাখার জোর আবেদন করছি।

×