
দিন দিন দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটের মুখে ইলিশের অভয়াশ্রমখ্যাত আন্ধারমানিক নদী। বর্তমানে নদীটিতে জোয়ারেও থাকছে না স্রোতের ধারা। পলির আস্তরণে তলদেশ ভরাট হওয়ার পাশাপাশি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে নদীর দুই পাড়। কোথাও কোথাও জেগেছে ডুবোচর। দুই তীরের প্লাবন ভূমি দখল করে বাড়িঘর, পুকুর, মাছের ঘের, ইটভাঁটিসহ অসংখ্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন মণকে মণ পলিথিন, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। পৌরবাসীর পারিবারিক বর্জ্য সব ভেতরের খাল থেকে নদীতে যাচ্ছে। ফলে দখলের পাশাপাশি নদী দূষণও চলছে সমানতালে। এক কথায় ঐতিহ্যবাহী এককালের স্রোতস্বিনী এই নদী এখন চরম সংকটাপন্ন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আন্ধারমানিক নদীকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। তখন ইলিশের যথেষ্ট বিচরণ ছিল এই নদীতে। অসংখ্য জেলের জীবিকার উৎস ছিল ইলিশ শিকার। এখন নদীটি একেবারে ইলিশশূন্য হয়ে গেছে। কালেভদ্রেও মিলছে না ইলিশ। ফলে বর্তমানে আন্ধারমানিক নদী শুধু নামেই ইলিশের অভয়াশ্রম। জেলেরা এই নদীতে সবশেষ কবে ইলিশ পেয়েছেন তা বলা মুশকিল। এখন বৈঠাচালিত ছোট নৌকায় বড়শি কিংবা চরে সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা ধরতে দেখা যায় স্থানীয় খণ্ডকালীন জেলেদের। আন্ধারমানিকে এক সময় জেলেরা ইলিশের পাশাপাশি অনেক মাছ ধরতেন। জীবিকার প্রয়োজন মেটাতেন। কিন্তু মাছের তীব্র সংকটে অনেক জেলে পরিবার ইতোমধ্যে বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। এমতাবস্থায়, জেলেসহ পরিবেশ সংগঠকদের শঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে আন্ধারমানিক নদী ইলিশের অভয়াশ্রমের সুখ্যাতি চিরতরে হারাতে পারে। এই পরিস্থিতির জন্য তারা নানাবিধ কারণের মধ্যে নদীর নাব্য সংকটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে মনে করছেন। পাশাপাশি নদী দখল-দূষণ-ভরাটও বহুলাংশে দায়ী। অবশ্য বর্তমানে আন্ধারমানিকে বাস্তব অবস্থা নিরূপণে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। আন্ধারমানিকে ইলিশের বিচরণসহ বর্তমান বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা আশাব্যঞ্জক। অর্থনৈতিক দিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যতিরেকে অন্য ১০টি দেশেই কমেছে ইলিশের উৎপাদন। একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে ৯-১০ শতাংশ হারে। বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশের জন্ম হয় বাংলাদেশে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে পাওয়া যেত ইলিশ। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদী-নদীতে ইলিশের সন্ধান মিলছে। কাজেই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বাংলাদেশের ইলিশের অনেক চাহিদা। তাই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে পারলে উল্লেখযোগ্য পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্যানেল