ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারে বর্ণিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

শরিফুল খান প্লাবন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩ জুলাই ২০২৫

মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারে বর্ণিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

ছবি: জনকণ্ঠ

মালয়েশিয়া শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং তার রকমারি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও রান্নার বৈচিত্র্যের জন্যও বিশ্বজুড়ে পরিচিত। মালয়, চাইনিজ, ভারতীয় ও আদিবাসী সংস্কৃতির এক অসাধারণ সংমিশ্রণ এই দেশের খাবারকে করেছে একেবারে অনন্য।

দেশটির ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো শুধু স্বাদেই নয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়ার প্রতিটি রাজ্যেই কিছু বিশেষ খাবারের পরিচিতি রয়েছে, যা সেখানকার সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

নাসি লেমাক – জাতীয় খাবারের গৌরব
নাসি লেমাক মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচিত। নারকেল দুধে রান্না করা ভাত, সঙ্গে সাম্বাল (মরিচভর্তা), ভাজা ছোট মাছ (ইকান বিলিস), ডিম, শসা এবং ভাজা চিনাবাদাম—এই উপাদানগুলো একত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার তৈরি করে।

চার কুই তিয়াও – চাইনিজ প্রভাব
চাইনিজ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আসা এই খাবারটি সয়াসস, রসুন, ডিম, চিংড়ি ও সসেজ দিয়ে ভাজা চাউমিন জাতীয় এক পদ। এটি স্ট্রিট ফুড হিসেবেও জনপ্রিয়।

রেন্ডাং – মাংসের রাজকীয় পদ
রেন্ডাং মূলত একটি ধীরগতিতে রান্না করা ঝাল গরুর মাংসের পদ, যার উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়ায় হলেও মালয়েশিয়াতেও এটি খুবই প্রিয়। ঈদ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এটি থাকেই।

সাতে – বারবিকিউর আদিম রূপ
ছোট করে কাটা মাংস (চিকেন বা বিফ), বিশেষ মশলায় ম্যারিনেট করে কাঠিতে গেঁথে গ্রিল করে তৈরি করা হয় সাতে। সঙ্গে থাকে পিনাট সস। এটি মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী স্ট্রিট ফুড হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।

কুয়েহ – রঙিন মিষ্টি পরিবেশ
কুয়েহ হলো বিভিন্ন ধরনের রঙিন কেক ও মিষ্টান্ন, যেগুলো চালের গুঁড়া, নারকেল, পাম সুগার দিয়ে তৈরি হয়। এসব খাবার ধর্মীয় উৎসব ও অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহৃত হয়।

ঐতিহ্যের টানে খাবারে ফিরে দেখা
মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার শুধু পেট ভরানোর উপকরণ নয়, বরং এগুলোতে মিশে থাকে এই দেশের ইতিহাস, জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য ও উৎসবের আবহ। খাবারের টেবিলে বসলে যেন পুরো মালয়েশিয়া উঠে আসে এক প্লেটেই।

এখানে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরাও এই খাবারগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন দিনে দিনে। অনেকে আবার নিজ উদ্যোগে এই খাবারগুলোর স্বাদ গ্রহণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারও করছেন, যার মাধ্যমে গড়ে উঠছে একটি সংস্কৃতি বিনিময়ের সেতুবন্ধন।

মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার শুধু স্বাদ নয়, এটি একেকটি গল্প, একেকটি ঐতিহ্যের বাহক। দেশটির বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিকে চেনার সবচেয়ে সরল পথ হতে পারে—এক প্লেট ঐতিহ্যবাহী খাবার।

মুমু ২

×