ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

গ্রামেই জীবনের ছন্দ: আধুনিকতার মাঝেও মালয়েশিয়ার গ্রামীণ শান্তি

শরিফুল খান প্লাবন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১ জুলাই ২০২৫

গ্রামেই জীবনের ছন্দ: আধুনিকতার মাঝেও মালয়েশিয়ার গ্রামীণ শান্তি

ছবি: জনকণ্ঠ

টাওয়ার আর হাইওয়ে ছাড়িয়ে, কুয়ালালামপুরের ঝলমলে আলো থেকে খানিকটা দূরে মালয়েশিয়ার গ্রামগুলোতে এখনো বয়ে চলে এক শান্ত-নিরিবিলি জীবন। যান্ত্রিকতার যুগেও এই গ্রামীণ জীবনযাপন যেন আপন ঐতিহ্য ও শিকড় আঁকড়ে বেঁচে থাকা এক সরল দৃষ্টান্ত।

গ্রামের মানুষ মানে আত্মার সম্পর্ক
মালয়েশিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলো—যেমন পেরাক, কেলান্তান, তেরেঙ্গানু, ও কেদাহ—এখনো সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক নির্ভরতায় গড়ে ওঠা। প্রতিবেশীর দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, ধর্মীয় উৎসবে একসাথে মিশে যাওয়া কিংবা ফসল কাটার মৌসুমে সমবায় চর্চা এখানকার নিত্যচিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমরা এখানে সবাই ভাই ভাই। কে ধনী, কে গরিব—এখানে সেটা বড় কথা না, বরং কে কবে সাহায্য করলো, সেটা মানুষ মনে রাখে।”

চাষাবাদ ও মৎস্যজীবন এখনো প্রধান পেশা
অনেকেই এখনো কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। ধান, পাম অয়েল, ফলমূল ও সবজি চাষ এখানে নিত্য ব্যাপার। নদীঘেঁষা এলাকায় মাছ ধরার দৃশ্য এখনো সাধারণ। যদিও প্রযুক্তি কিছুটা ঢুকেছে—সোলার পাম্প, আধুনিক কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি—তবুও মানুষের জীবনে একধরনের ধীর গতি ও স্থিতি রয়ে গেছে।

নারী ও যুব সমাজেও পরিবর্তনের ছোঁয়া
মেয়েরা আগে যেখানে শুধু গৃহস্থালি কাজেই সীমাবদ্ধ থাকতেন, এখন অনেকেই ঘরেই ছোট ব্যবসা করছেন—অনলাইন ফুড ডেলিভারি, হ্যান্ডিক্রাফট বা বুটিকের পণ্য বিক্রি করছেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যুবকরাও কেউ কেউ কৃষি ছেড়ে শহরে চাকরির খোঁজে যাচ্ছেন, তবে অনেকেই গ্রামে থেকেই নতুনভাবে কৃষিকাজ ও উদ্যোক্তা হিসেবে পথ খুঁজছেন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
যদিও মালয়েশিয়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অনেক এগিয়েছে, তবুও অনেক গ্রামের স্কুল ও ক্লিনিক এখনো শহরের মতো উন্নত নয়। ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল থাকায় অনলাইন ক্লাস বা ডিজিটাল কাজ অনেক এলাকায় কষ্টকর। সরকার এসব অঞ্চলে ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

পর্যটন ও সংস্কৃতি—গ্রামের নতুন সম্ভাবনা
মালয় গ্রামগুলোর ঐতিহ্যবাহী কাঠের বাড়ি, পুকুর, নারকেল গাছের সারি ও স্থানীয় খাবার বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। ‘হোমস্টে প্রোগ্রাম’ চালু করে অনেক গ্রামবাসী এখন ঘরে ঘরে বিদেশি পর্যটকদের আতিথেয়তা দিচ্ছেন। এতে অর্থনৈতিক প্রবাহও তৈরি হচ্ছে।


মালয়েশিয়ার গ্রামীণ জীবন যাপন একদিকে সরলতা, অন্যদিকে ধীরে ধীরে আধুনিকতার সংমিশ্রণ। শহরের কোলাহলের বাইরে এই শান্তিপূর্ণ গ্রামগুলো এখনো ধরে রেখেছে আত্মার টান, পারিবারিক মূল্যবোধ ও প্রকৃতির সঙ্গে সখ্যতা। গ্রামই যেন মালয়েশিয়ার প্রকৃত প্রাণ।

শিহাব

×