ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

লন্ডনে ১৯৭৮ সালে বর্ণবাদী হামলায় নিহত ইসহাক আলীর স্মরণে সভা

মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, যুক্তরাজ্য

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ২৮ জুন ২০২৫

লন্ডনে ১৯৭৮ সালে বর্ণবাদী হামলায় নিহত ইসহাক আলীর স্মরণে সভা

১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনিতে বর্ণবাদী হামলার শিকার ইসহাক আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পূর্ব লন্ডনের ভ্যালেন্স রোডে ‘পিওর চা-ই’ সেমিনার রুমে এক হৃদয়স্পর্শী স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

লন্ডনের ‘আলতাব আলী ফাউন্ডেশন’-এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানটি ইসহাক আলীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক একদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূরউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আনসার আহমেদ উল্লাহর পরিচালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ইসহাক আলীর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রতিফলনের জন্য তাঁর পরিবারের সদস্য, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মী এবং বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা একত্রিত হন।

গবেষক ড. আনসার আহমেদ উল্লাহ ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ১৯৭৮ সালের ২৬ জুন, ৪৫ বছর বয়সী ইসহাক আলী ও ২০ বছর বয়সী ফারুক উদ্দিন পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনির উরসউইক রোডে আলীর বাসার কাছাকাছি তিনজন শ্বেতাঙ্গ যুবকের দ্বারা আক্রান্ত হন। পূর্বের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইজন ঘুষি মেরে এবং একজন বুটের ফিতা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। কুপারসেল রোডের বাসিন্দা ও পাঁচ সন্তানের জনক ইসহাক আলী সেদিন মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং হ্যাকনি হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।

ঘটনার পর ইসহাক আলীর চাচাতো ভাই সফর উদ্দিন ‘হ্যাকনি গেজেট’-কে বলেছিলেন, “তাঁর গায়ের রঙের কারণেই তাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। এরকম ঘটনা ইস্ট এন্ডে প্রায়ই ঘটে।”

হ্যাকনির কমিউনিটি কর্মী অলোক বিশ্বাস জানান, ফারুক উদ্দিন রিপোর্ট করেছিলেন যে আক্রমণকারীরা বর্ণবাদী গালিগালাজ করেছিল এবং তাঁদের "পাকি" ও "কালো" বলে সম্বোধন করেছিল।

সভায় ইসহাক আলীর শ্যালক জাহাঙ্গীর খান স্মৃতিচারণ করে বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মরিয়া ইউনিয়নের ফেন গ্রামে জন্ম নেওয়া ইসহাক আলী ছিলেন অত্যন্ত রসিক, বন্ধুবৎসল ও অমায়িক একজন মানুষ। তিনি লন্ডনের হলওয়ে রোডে একটি রেস্টুরেন্ট ও হ্যাকনিতে একটি কারখানার মালিক ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আকিকুর রহমান, আলতাব আলী ট্রাস্টের রফিক উল্লাহ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফ্রন্টের (বিওয়াইএফ) জামাল মিয়া, জয়নাল চৌধুরী, আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্টের চুনু মিয়া, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল মালিক খোকন, অভিনেতা স্বাধীন খসরু, স্বাধীনতা ট্রাস্টের চেয়ারপারসন জুলি বেগম, বাংলাদেশ ইয়ুথ লীগের সেলিম উল্লাহ, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি অধ্যাপক সাজিদুর রহমান, ব্রিজবাংলা২৪-এর সম্পাদক শাহ মুস্তাফিজুর রহমান বেলাল, ফাউন্ডেশনের সহকারী সম্পাদক জামাল খান, ইসহাক আলীর কনিষ্ঠ পুত্র শুহেল আহমেদ, তাঁর পুত্রবধূ হাসিনা আহমেদ, প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের শুভা মতিন ও খালিক আহমেদ।

অনুষ্ঠানে হ্যাকনি ও টাওয়ার হ্যামলেটস ডিফেন্স কমিটির সদস্য অলোক বিশ্বাস, ভজন চ্যাটার্জী এবং প্যাট্রিক কোডিকারা, যাঁরা ইসহাক আলীর মৃত্যুর পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বক্তারা ইসহাক আলী ও বৃহত্তর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘স্বাধীনতা ট্রাস্ট’-এর সহযোগিতায় একটি স্মারক পুস্তিকা তৈরির প্রস্তাব এবং প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, মৃত্যুর নয় বছর আগে ইসহাক আলী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়—কেন্টিশ টাউন রোডের ১৭ বছর বয়সী এক ক্যাবিনেট মেকার ও হোমারটনের ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোর। ১৯৭৯ সালে তাঁদের প্রত্যেককে মাত্র ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তাও খুনের অভিযোগে নয়, বরং ছিনতাইয়ের অভিযোগে।

অনুষ্ঠানটি হাফিজ মো. জিল্লু খানের নেতৃত্বে এক বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।

×