ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাইয়ে দেশের অর্থনীতির ভিত নাড়াতে যেভাবে লড়েছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৩ জুলাই ২০২৫

জুলাইয়ে দেশের অর্থনীতির ভিত নাড়াতে যেভাবে লড়েছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

ছবি: সংগৃহীত।

একটা রাত। একটা পোস্ট। আর হাজার মাইল দূরে বসে নেওয়া এক তরুণের সিদ্ধান্ত—যেটি নাড়িয়ে দিয়েছিল স্বৈরাচার সরকারের ভিত, কাঁপিয়ে দিয়েছিল দেশের অর্থনীতির গোড়াও।

জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে চলা গণঅভ্যুত্থানে যখন আন্দোলনের অন্যতম মুখদের গ্রেফতার করে সরকার, তখন ১৯ জুলাই রাতে ডিবি অফিস থেকে আসে এক ঘোষণা—"আন্দোলন স্থগিত"।

এই ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রবাসীরা। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তরুণ তারেক আহমেদ তখনই ফেসবুকে লেখেন: “হাসিব বা নাহিদ না বলা পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘোষণা বিশ্বাস করবেন না।”

এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। তারেক হয়ে ওঠেন প্রবাসীদের কাছে আন্দোলনের একটি মুখ। অনেকে আন্দোলনের আপডেটের জন্য তারেকের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

তারেক বলেন, "আমি একটা স্ট্যাটাস দেই—এখনো আমাদের আসিফ বা নাহিদ ওরা না বলা পর্যন্ত এটা বিশ্বাস করা উচিত না। সেই পোস্টটা হিউজ রেসপন্স পায়। এরপর বিবিএনপিসিএল, জুলকানসহ বিভিন্ন মিডিয়া সেই খবর তুলে ধরে। এটা আমার জন্য ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট।"

কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি তারেক। এক রাতে নেন আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত—দেশে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তার আহ্বানে সাড়া দেন বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা প্রবাসীরা। শুরু হয় "রেমিটেন্স শাটডাউন"। সরকারের ওপর চাপ বাড়ে।
তখনই দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছেন: “প্রবাসী ভাইবোনেরা, অনুরোধ করছি, রেমিটেন্স পাঠান প্লিজ।”

তারেক বলেন, "আমি ভাবিনি, আমার এই স্ট্যাটাসটা এতটা প্রভাব ফেলবে। যখন দেখলাম পলক সাহেব হাতজোড় করে আবেদন করছেন, তখন বুঝলাম—এই উদ্যোগ সত্যিই একটা বড়সড় ইফেক্ট ফেলেছে।"

দেশে যেমন ছাত্ররা রাজপথে প্রাণ দিচ্ছিল, তেমনি বিদেশে বসে অনেক প্রবাসী জেলে যান, হয়রানির শিকার হন, শুধু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে।

তারেক বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দখলে থাকা ব্যাংকগুলোতে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করবো।”

এই সাহসী ভূমিকা নেওয়া প্রবাসীরা আজও পুরনো সমস্যার মধ্যেই ডুবে আছেন—এয়ারপোর্টে হয়রানি, ভিসা জটিলতা, অতিরিক্ত ভাড়া, জেলে যাওয়ার ভয়।

তারেক জানান, “অনেক প্রবাসী ভাই আমাকে বলেছে—আমরা এয়ারপোর্টে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। অথচ সরকারের কাছে যোগাযোগের সুযোগ নেই। সরকারও এসব নিয়ে খুব একটা কনসার্ন না।”

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে অবস্থানরত প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তারেক বলেন, “বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। ওনারাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছেন। প্রবাসীদের এই ভূমিকা ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।”

দেশের বাইরে থেকেও দেশের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তারা। ফেসবুকের পোস্ট থেকে রেমিটেন্স শাটডাউনের মতো সিদ্ধান্ত—এই সাহসী প্রবাসীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, দেশপ্রেমের কোনো সীমানা নেই।

তাদের আত্মত্যাগ ও অবদান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নুসরাত

×