ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

নেতৃত্বে বয়স নয়, দরকার দাহ্য অভিজ্ঞতা

ছাত্রদল যখন রাজপথে, প্রশ্নকারীরা তখন ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় 

সায়মা বিনতে কবির

প্রকাশিত: ২২:১১, ২ জুলাই ২০২৫

ছাত্রদল যখন রাজপথে, প্রশ্নকারীরা তখন ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় 

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে একটি নাম বারবার ফিরে আসে দৃঢ়তা, ত্যাগ এবং সাহসিকতার প্রতীকে—ছাত্রদল। যুগে যুগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের বলিষ্ঠ উপস্থিতি যেমন ইতিহাসের পাতায় অম্লান, তেমনি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়ও তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গোষ্ঠী বা ব্যক্তি—কেউ কেউ আবার ছাত্রলীগের  ছায়ায় লুকিয়ে থেকে—ছাত্রদলের সিনিয়র নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু এই প্রশ্নের পেছনে রাজনৈতিক চাতুর্য আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নেই।

একটি বৃহৎ, বিস্তৃত এবং আদর্শভিত্তিক ছাত্রসংগঠন পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ, পরিপক্ব ও দূরদর্শী নেতৃত্ব অপরিহার্য। এটি কেবল নেতৃত্বের ভারসাম্য নয়, আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ। বিগত প্রায় দুই দশক ধরে ছাত্রদল এমন এক শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে, যিনি প্রশাসন, আইন, বিচার বিভাগ, এমনকি গণমাধ্যম পর্যন্ত নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। শেখ হাসিনার মতো একজন কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে যে ছাত্ররাজনীতি করা হয়, তাতে নেতৃত্বে হঠাৎ এসে দাঁড়ানো তরুণ নয়, প্রয়োজন হয় ঝাঁপসা সময় পার করা সাহসী ও অভিজ্ঞ যোদ্ধাদের।

ছাত্রদলের এই সিনিয়র নেতৃত্ব শুধু বয়সে নয়, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রতিজ্ঞায়ও পরিণত। তাদের অনেকেই নিজের যৌবনের সোনালি দিনগুলো নির্যাতন, কারাবরণ ও মামলার ভেতর কাটিয়েছেন। যখন প্রশ্নকারীরা নিরাপদে থেকে ‘শেখ হাসিনার ছায়ায়’ পৃষ্ঠপোষকতা নিয়েছেন, তখন ছাত্রদলের কর্মীরা সেই একই সরকারের রোষানলে পড়ে নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তারা কখনোই প্রতিপক্ষের ঘরে লুকিয়ে নিজেদের রক্ষা করেনি। এটি এক ধরনের আদর্শিক দৃঢ়তা, যা কেবল অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দিয়েই সম্ভব।

অনেকে বলে থাকেন, ছাত্রদলে তরুণদের সুযোগ দেওয়া হয় না। বাস্তবতা হলো, ছাত্রদলের প্রতিটি শাখা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু নেতৃত্বে অভিজ্ঞদের উপস্থিতি তরুণদের পথপ্রদর্শক হিসেবেই কাজ করে। এটি কোনো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা।

অতএব, আজ যখন ছাত্রদল আবারও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তখন তাদের নেতৃত্বে অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রদলের নেতৃত্বে তরুণরা যেমন যুক্ত হচ্ছেন, তেমনি অভিজ্ঞরা থেকে যাচ্ছেন যেন সংগ্রামের সেতুটা ভেঙে না পড়ে। এই ভারসাম্যই আগামীদিনের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে অন্যতম মূল ভিত্তি।
 

ফারুক

×