
সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চুরি হয়। রিজার্ভ চুরির এ ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। চুরির সঙ্গে বাংলাদেশসহ ৬ দেশের অপরাধীরা জড়িত। এই সাইবার ডাকাতির মহানায়ক তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, যিনি বর্তমানে কানাডায় পলাতক।বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১ জনের একটি দুষ্টচক্রের সহযোগিতায় সাইবার ডাকাতি হয়েছে। এই চক্রের হোতা পদচ্যুত ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। দেশি চক্রটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, ভারতীয় দুই মাস্টারমাইন্ড, নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানা। খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা, একটি স্বাধীন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিরাপদ নয় প্রতিবেশী হায়েনা দেশের ছোবল থেকে। একজন মেষ পালক, রাখাল বালক থেকে জীবনের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়া, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো প্রান্তিক জনপদের ড. আতিউর রহমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ায় দেশবাসী খুশি হন, কিন্তু তিনি ছিলেন খুবই অযোগ্য, অদূরদর্শী, তোষামোদকারী এবং স্তুতিপ্রিয়। নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসতেন। তার চারপাশে অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। তারা তেলবাজি করে স্বার্থ হাসিল করে নিত।
গভর্নর আতিউর রিজার্ভ চুরির ঘটনা ২৯ দিন লুকিয়ে রাখেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকেও জানাননি। গভর্নরের অনুগত দেশীয় ও ভারতীয় চক্র রিজার্ভ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ম্যানিলার ‘দ্য ইনকোয়ারার’ পত্রিকায় ঘটনাটি প্রকাশ পায়। ফলে দুনিয়ার সব মানুষ জানতে পারে। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের আর্থিক খাতে ঘটনাটি তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও লেনদেন ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং কীভাবে ‘সাইবার হ্যাকিং’ থেকে আর্থিক খাতকে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে তৎপরতা শুরু করে। ব্যাংকিং খাতের এত বড় দুর্ঘটনার পরও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ, দেশবাসী দেখতে পায়নি।
উল্লেখ্য, সব কিছুই হয়েছে মাস্টার প্লান অনুযায়ী। গভর্নর আতিউর তার পছন্দের, ভারতীয় দুজন নাগরিককে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ দিয়ে রিজার্ভ চুরির পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির ঠিক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে চুরির দুয়ার খুলে দেন এবং রাকেশ আস্তানা রিজার্ভ চুরির পর সব তথ্য ও ডকুমেন্ট মুছে ফেলেন, যা ‘আলীবাবা চল্লিশ চোরের’ কাহিনীকেও হার মানায়। সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং সিআইডির তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে জানা যায়, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা ও জাপানের নাগরিক। সহযোগিতা করেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরা।
প্যানেল