
আধুনিক নগর জীবনে হাঁটা পথে বিকিকিনির প্রচলন একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো বড় শহরগুলোতে, রাস্তার ধারে, ফুটপাতে এবং ব্যস্ত সড়কের পাশে বিকিকিনির ঢেউ দেখা যায়। এই বিকিকিনি শুধু পণ্য বিক্রির মাধ্যম নয়, বরং একটি জীবনধারা, সংগ্রাম এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের প্রতিফলন।
হাঁটা পথে বিকিকিনির প্রধান আকর্ষণ হলো এর সহজলভ্যতা ও বৈচিত্র্য। ফল, সবজি, কাপড়, জুতা, খাবার, পানীয় থেকে শুরু করে ছোটখাটো ইলেকট্রনিক পণ্য- সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষের কাছে এটি সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী একটি কেনাকাটার মাধ্যম। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে ফুটপাতের এই দোকানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এই বিকিকিনির পেছনে রয়েছে হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকার গল্প।
এই পথচলতি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই গ্রাম থেকে শহরে আগত। জীবিকার তাগিদে তারা ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করেন। তবে তাদের জীবন সংগ্রামে ভরা। ফুটপাতে জায়গা পাওয়া, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের হয়রানি, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা এবং অনিশ্চিত আয় তাদের প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। এরপরও তারা হাল ছাড়েন না। তাদের উদ্যম ও পরিশ্রম শহরের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
হাঁটা পথে বিকিকিনির কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হয়, যা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি এবং নকল পণ্যে বাজার সয়লাব হওয়া গ্রাহকদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়মকানুন প্রয়োজন।
হাঁটা পথে বিকিকিনি শুধু একটি ব্যবসা নয়, এটি আমাদের সমাজের একটি জীবন্ত চিত্র। এটি সংগ্রামী মানুষের জীবনযাত্রা এবং শহরের গতিশীলতার প্রতীক। তবে এই ব্যবস্থাকে আরও সংগঠিত ও নিরাপদ করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই উপকৃত হতে পারেন।
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা থেকে
প্যানেল