
ছবি:সংগৃহীত
উজবেকিস্তান তার পুরোনো ও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়া যুদ্ধবিমান বহরকে আধুনিকায়নের জন্য পাকিস্তান-চীন যৌথভাবে তৈরি করা JF-17 ‘থান্ডার’ যুদ্ধবিমান কেনার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
এটি শুধু একটি সামরিক চুক্তি নয়—বরং মধ্য এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও হতে পারে।
চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, প্রশিক্ষণ শুরু
সরকারিভাবে এখনো ঘোষণা না এলেও, উজবেক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে—একজন উজবেক পাইলট একটি চীনা যুদ্ধবিমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত।
চীনের তরফ থেকেও ইতোমধ্যেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট এক উচ্চপদস্থ সূত্র। এটি চীন ও উজবেকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা আস্থা ও কৌশলগত ঘনিষ্ঠতার বড় প্রমাণ।
JF-17 কী? কেন এত আগ্রহ?
JF-17 ‘থান্ডার’ একটি হালকা মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যা পাকিস্তান ও চীনের যৌথ প্রকল্প। এটি মূলত তৈরি হয়েছে উন্নত ক্ষমতার পাশাপাশি খরচ কম রাখার লক্ষ্যে—যেটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক বড় সুবিধা।
বিমানটিতে রাশিয়ান RD-93 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা একে Mach 1.6 (ধ্বনির গতির চেয়ে বেশি) গতিতে উড়তে সহায়তা করে। এটি একই সঙ্গে আকাশপথে যুদ্ধ, ভূমিতে আঘাত, ও সীমান্ত টহলের কাজে ব্যবহারযোগ্য।
JF-17-এর Block III সংস্করণে রয়েছে অত্যাধুনিক AESA রাডার, PL-10 ও PL-15 মিসাইল—যা অনেকটা আমেরিকান F-35 কিংবা রাশিয়ান Su-57 এর প্রযুক্তির কাছাকাছি।
কেন রাশিয়ার বদলে চীন?
বছরের পর বছর উজবেকিস্তান রাশিয়ার তৈরি অস্ত্রের উপর নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক চাপে রাশিয়ার সামরিক রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে এসেছে। শুধু অস্ত্র বিক্রি নয়, তারা প্রযুক্তি স্থানান্তর, প্রশিক্ষণ, এমনকি উজবেকিস্তানে স্থানীয়ভাবে কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করারও সুযোগ দিচ্ছে—যা দীর্ঘমেয়াদে উজবেকিস্তানকে আরও আত্মনির্ভর করে তুলবে।
মধ্য এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে
উজবেকিস্তান একা নয়। তুর্কমেনিস্তানসহ বেশ কয়েকটি মধ্য এশিয়ার দেশ এখন চীনের তৈরি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, রাডার ও যুদ্ধবিমান কিনছে। কারণ তারা বুঝছে—রাশিয়ার উপর একচেটিয়া নির্ভরতা এখন আর নিরাপদ নয়।
চীনের এই উদার শর্ত ও উন্নত প্রযুক্তি অনেক দেশের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এটি শুধু যুদ্ধবিমান নয়, কূটনৈতিক বার্তাও
JF-17 কিনলে উজবেকিস্তান শুধু একটি যুদ্ধবিমান পাবে না। তারা পাবে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা: "আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছি, প্রযুক্তি-নির্ভর এবং আত্মনির্ভর একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে।"
চীনের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, পুরো কৌশলগত সম্পর্কেই বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মারিয়া