
ছবিঃ সংগৃহীত
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মিশুকচালক মো. তাফরুল ইসলাম সৈকত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ঘাতক মো. রিফাতকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত মিশুকটি ছিনতাই করতেই বন্ধুর হাতে খুন হয় সৈকত। ঘাতক রিফাতের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাঙ্গলিয়া খাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধামাটি উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত রিফাত উপজেলার আতাকরা ভূঁইয়া বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে। বর্তমানে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পূর্ব চাঁন্দিশকরা ওয়াপদা রোডের আবুল ড্রাইভারের কলোনিতে ভাড়া থাকে। সে নিজেও একজন মিশুকচালক বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, গত ৩ জুলাই বিকেলে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খালের লক্ষীপুর ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাতনামা এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার সুবাদে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন তার বাবা মো. খাইরুল ইসলাম। জানা গেছে, ভিকটিম সৈকত দীর্ঘদিন যাবৎ পৌরসভাধীন ওয়াপদা রোডে ইউনুছ মিয়ার বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতো। এখানে সে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সৈকতের (১৯) সঙ্গে একই এলাকার পাশ্ববর্তী আবুল ড্রাইভারের কলোনির ভাড়াটিয়া অটোচালক রিফাতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তারা কয়েক বন্ধু মিলে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে গোপনে মাদক সেবন করতো বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আসামি রিফাত (২৯)।
ভিকটিমের বন্ধু রিফাতও অটো চালিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি পরিশোধে বারবার ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি তার অপর বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে। আসামি রিফাত তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর প্ররোচনায় একজন মিশুকচালককে হত্যা করে তার অটোরিকশাটি (মিশুক) ছিনতাই ও বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধের পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বপরিচিত বন্ধু ভিকটিম মো. তাফরুল ইসলাম সৈকতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ২ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টায় ভিকটিমের মিশুক ভাড়ায় নিয়ে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে উপজেলা মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খাল সংলগ্ন নির্জন স্থানে গিয়ে দুই বন্ধু মিলে দীর্ঘক্ষণ অহেতুক গল্প-আড্ডায় সময় অতিবাহিত করে।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামির অপর দুই বন্ধু ঘটনাস্থলে আসলে ভিকটিমকে হত্যা করার কথা ছিল। অপর বন্ধুরা আসতে বিলম্ব হচ্ছিল এবং এদিকে রাতও গভীর হওয়ায় আসামি রিফাত পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনাস্থলের পাশে লুকিয়ে রাখা ধারালো ধামা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সুযোগ বুঝে ভিকটিমের মাথার পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ মারে। এতে ভিকটিম মাটিতে পড়ে গেলে রিফাত তাকে উপর্যুপরি আরও ৫/৬টি কোপ মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে, ভিকটিমের সঙ্গে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা এবং মিশুকের চাবি নিয়ে যায়। পরে মরদেহটি নাঙ্গলিয়া খালের পানিতে ফেলে রেখে সে সৈকতের মিশুকটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওইদিন বিকেলে স্থানীয়রা খালের পাশে লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির কাছে ভিকটিমের মোবাইল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরই জেরে প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিকে উপজেলার তারাশাইল গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইমরান