
ছবিঃ সংগৃহীত
ফ্রান্স তাদের জার্মান অংশীদারকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা যৌথ ফরাসি-জার্মান-স্প্যানিশ FCAS (ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম) প্রোগ্রামে ৮০ শতাংশ কাজের ভাগ নিতে চায়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এই প্রকল্পের মোট মূল্য ১০০ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি (১১৬.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তবে, প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই অনেক দেরিতে চলছে এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এর মধ্যে, ফ্রান্সের ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন কোম্পানি তাদের দাবি জানিয়েছে যে, তারা পুরো প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজের দায়িত্ব নিতে চায়। তাদের মতে, ফ্রান্সের রয়েছে এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা, যা প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, জার্মানির এক সাংসদ ক্রিস্টফ শ্মিড বলেছেন, ফ্রান্স যদি তাদের দাবি নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে এই যৌথ প্রকল্পের জন্য এটি হবে শেষ পেরেক, যা প্রকল্পটির সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবে। এমনকি ফরাসি মিডিয়া এটিকে সমর্থন জানাচ্ছে, কারণ তারা মনে করছে, ফ্রান্সের জন্য সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪০-২০৪৫ সালের মধ্যে ফ্রান্সের রাফালে যুদ্ধবিমান অবসর নেয়া হবে, তাই তাদের FCAS প্রজেক্টে নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
ফ্রান্সের অতীত: যৌথ প্রকল্প থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া
ফ্রান্সের এই ধরনের আচরণ নতুন নয়। ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে ফ্রান্স যৌথ যুদ্ধবিমান উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সরে গেছে, কারণ তারা কাজের ভাগ নিয়ে এককভাবে বড় ভূমিকা নিতে চেয়েছে। যেমন ১৯৬০-এর দশকে প্যানাভিয়া টর্নেডো প্রকল্পে ফ্রান্স অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু একসময় তারা নিজেদের পথ বেছে নেয়। একই ঘটনা ঘটেছিল ইউরোফাইটার টাইফুন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও।
১৯৬৫ সালে, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স যৌথভাবে একটি আধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা করে, কিন্তু ১৯৬৭ সালে ফ্রান্স সেই প্রকল্প থেকে সরে যায় এবং প্যানাভিয়া টর্নেডো প্রকল্পে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ইতালি অংশগ্রহণ করে। একইভাবে, ১৯৮০-এর দশকে ইউরোফাইটার টাইফুনের প্রকল্পেও ফ্রান্স তাদের অংশ নেয়ার পরপরই সরে যায়।
এরপর, ফ্রান্স নিজেদের রাফালে যুদ্ধবিমান তৈরিতে মনোযোগ দেয় এবং পরে তা আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপকভাবে সফল হয়। এটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাতে রয়েছে।
FCAS-এর ভবিষ্যৎ কি?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, FCAS প্রকল্পের ভবিষ্যত কী হবে? যদি ফ্রান্স আবার একা হয়ে যায়, তবে কি এই যৌথ প্রকল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে? যদিও ফ্রান্সের ইতিহাসে এককভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত আগেও সফল হয়েছে, কিন্তু FCAS প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি বিপদজনক হতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যে হয়তো এই প্রকল্পে কোনো বড় পরিবর্তন আসবে, বা এটি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন তাদের জাতীয় স্বার্থ এবং সামরিক শক্তির দিকে নির্দেশ করছে, তেমনি অন্যদিকে, ইউরোপীয় অংশীদারদের মধ্যে বিভাজনও বাড়াচ্ছে। ইতিহাসে যেভাবে ফ্রান্স যৌথ প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে এককভাবে কাজ করেছে, তাতে এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়।
একটি জটিল ইতিহাস
ফ্রান্সের এই আচরণ সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই মনের অবস্থা, যে তারা বড় কাজের জন্য নেতৃত্ব নিতে চায়, তা অনেক সময় অন্য অংশীদারদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটি শুধু FCAS নয়, ভবিষ্যতে যে কোনো যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পেও এমন বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
যদিও ফ্রান্সের সিদ্ধান্তটি তাদের দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক হতে পারে, তবে এটি ইউরোপীয় সহযোগিতার ভবিষ্যতের ওপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে যায়।
মারিয়া