ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ধ্বংসের এক সেকেন্ড: ঢাকায় যদি পারমাণবিক বোমা পড়ে!

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১২ জুলাই ২০২৫

ধ্বংসের এক সেকেন্ড: ঢাকায় যদি পারমাণবিক বোমা পড়ে!

ছবি: সংগৃহীত

ধরা যাক, ঢাকার ফার্মগেটে একটি এক মেগাটনের পারমাণবিক বোমা পড়েছে। ব্যস্ত শহরের প্রতিটি স্পন্দন মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। বিস্ফোরণের মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যেই দুই থেকে তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে তৈরি হবে সূর্যের চেয়েও বেশি তাপমাত্রার আগুনের বলয়—যেখানে সবকিছু প্লাজমায় রূপান্তরিত হবে। শাহবাগ, তেজগাঁও, বাংলা মোটর, নিউমার্কেট, খামারবাড়ি—সবই হয়ে যাবে ছাই।

প্রথম ধাপ: তাৎক্ষণিক আগুনের বলয়
এই বলয়ের ভেতরে থাকা মানুষ, গাছপালা, ভবন—সবকিছু এক সেকেন্ডের আগেই উবে যাবে। এটি হবে প্লাজমা রূপান্তর, যার তাপ ও বেগ বোঝা প্রায় অসম্ভব।

দ্বিতীয় ধাপ: তেজস্ক্রিয় ঢেউ ও আগুনের বিস্তার
এরপর ছড়াবে তেজস্ক্রিয়তা—১৩ থেকে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মহাখালী, খিলগাঁও, রামপুরা, উত্তরা—এই এলাকার মানুষ আগুনে দগ্ধ হবে হঠাৎ, রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময়ও কেউ বুঝে উঠতে পারবে না কী ঘটছে। এই অঞ্চলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

তৃতীয় ধাপ: বিস্ফোরণজনিত ঝাঁকুনি ও ধ্বংস
২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভবন ধসে পড়বে, বাতাস ছুটবে শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত। কেউ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে হয়তো ছবি তুলতে যাবে—ক্লিক করার আগেই তারা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ঢাকার তেল ও গ্যাস স্টেশনগুলো বিস্ফোরণকে আরও ভয়ংকর করে তুলবে।

 চতুর্থ ধাপ: মাশরুম মেঘ ও পারমাণবিক শীত
বিস্ফোরণের পর আকাশে দেখা দেবে মাশরুম-আকৃতির কালো মেঘ, যা কার্বন কণায় ছেঁয়ে যাবে। সূর্যের আলো পৌঁছাবে না, শুরু হবে নিউক্লিয়ার উইন্টার। খাদ্য উৎপাদন থেমে যাবে, শুরু হবে দুর্ভিক্ষ।

পঞ্চম ধাপ: তেজস্ক্রিয় বৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে ফলআউট। গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ এমনকি ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তেজস্ক্রিয় কণা। যারা অলৌকিকভাবে বেঁচে যাবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তৃষ্ণা, ক্ষুধা ও চিকিৎসাহীন অসহায় জীবন।

এটি যদি হয় এক মেগাটন, তবে এক গিগাটন?
এখনকার পারমাণবিক বোমাগুলো ফ্যাটম্যান বা লিটল বয়ের চেয়ে ৬০ গুণ বেশি শক্তিশালী—এক গিগাটন শক্তির বোমা এক মিলিসেকেন্ডেই একটি শহরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে।

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়: এমন অস্ত্র কেন?
বিশ্বে এখন ১৩ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক বোমা মজুদ আছে। অথচ ২০১৭ সালে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশ পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞায় রাজি হলেও শক্তিধর দেশগুলোর আপত্তিতে তা কার্যকর হয়নি।

নিরাপত্তার অজুহাতে এই ভয়ংকর অস্ত্র তৈরি হচ্ছে, কিন্তু কোনো একটি ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা নেতার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব মুহূর্তেই গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

 

শেখ ফরিদ 

×