ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ফেনীর বন্যাকবলিত জনপদে ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, পানি নামছে ধীরগতিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী 

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:০১, ১২ জুলাই ২০২৫

ফেনীর বন্যাকবলিত জনপদে ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, পানি নামছে ধীরগতিতে

ত্রান উপদেষ্টা ফারুক ই আজম আজ ফুলগাজী রন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন

ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু কিছু এলাকা।পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১১৪টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। ফেনীর পরশুরামে বন্যার পানির সঙ্গে আসা সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার (৪৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। রোকেয়া পরশুরাম পৌরসভার মধ্যম সলিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি অনেক বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ। বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্য দুই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকায় পানি নামার সঙ্গে ফুটে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। অনেক এলাকায় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওযা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইযা উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় গন্তব্যে পাড়ি দেওয়া মানুষজনের মনে স্বস্তি ফিরেছে। ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এছাড়া ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা এলাকার আংশিক অংশে এখনো পানি নামেনি। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এখন পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইযা উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।

ফুলগাজীর উত্তর তারালিয়া এলাকার বাসিন্দা আছমা আক্তার বলেন, ঘর থেকে পানি নামলে বাড়ির উঠোনে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল-ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও সরবরাহ না থাকায বাজারে প্রয়োাজনীয জিনিসপত্র পাওযা যাচ্ছে না। ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কথা বলেছেন। উপদেষ্টা আজ ফুলগাজী বন্যা কবলিত এরাকা পরিদর্শন করেন। জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য  ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের আরও আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনী নৌযানের মাধ্যমে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও মজুদ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তায় বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি অংশে ভাঙনের দেখা দেয়। এতে বন্য কবলিত হয় ফেনীর ৫ টি উপজেলার ১১৪ টি গ্রাম।

 

রাজু

×