
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে অদৃশ্য শত্রু। প্রশাসনের মধ্যে এখনো স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদলের শহীদদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, সুষ্ঠু-স্বাভাবিক পরিস্থিতি কারা ও কীভাবে বাধাগ্রস্ত করছে? জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন জোরদার করা হচ্ছে না? এ সময় গত বছরের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ৩ মাস আগেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বিষয়ে মতামত দিয়েছে বিএনপি। এখন দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উপস্থিত শহীদের স্বজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ বিষয়টি অনুভব করতে পারেন না। যারা এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তারা অনুভব করতে পারবেন। স্বৈরাচারের গত ১৬ বছরের শাসনামলে আপনাদের স্বজনদের মতো আরও বহু মানুষ তাদের স্বজনদের হারিয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, তার মধ্যে যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যারা জীবন দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য ছিল এদেশের পরিবর্তন হবে, মানুষের ভাগ্যের একটু পরিবর্তন হবে। এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ মনে করে বিএনপির সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে এবং বিএনপিই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে। টিভিতে টকশোতে দেখবেন অনেকে বলে দেশ নিয়ে বিএনপির এই পলিসি নেওয়া উচিত, ছাত্র-শ্রমিকদের নিয়ে পলিসি নেওয়া উচিত। তারা বলে এই কারণে তারা মনে করে আগামী দিনে বিএনপি দেশ পরিচালনা করবে। সেজন্যই বিএনপিকে এই কথা বলবে।
এই মুহূর্তে মিডিয়ায় একটি গল্প তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ইদানীং পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখছি বিএনপি সংস্কারের এটি মানছে না, সেটি মানছে না। অপরপক্ষে, অনেক দল সব মেনে নিচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এখানে এসেছে আলোচনা করতে, যদি সব মেনে নিতে হয় তাহলে আলোচনার কী দরকার ছিল। সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু কিছু ব্যক্তি ও মিডিয়া বলতে চাচ্ছে বিএনপি এটা মানছে না, ওটা মানছে না। আর কেউ কেউ এটা মানছে, ওটা মানছে।
সরকার কেন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বরাবর বলেছি, অন্যায় যেই করুক তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এই সরকারের কাছে আমাদের সবার প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে?
তিনি বলেন, গতকাল যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা খুব আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি স্ক্রিনে যাকে হত্যা করতে দেখা গেছে তাকে কেনো সরকার এখনো গ্রেপ্তার করেনি? তদন্তের পর যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন বসে আছে?
শহীদদের বিচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও অনেক দলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এমনকি নিরপেক্ষ অনেক মানুষও শহীদ হয়েছেন দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে। আগামীতে বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে এসব হত্যার বিচার সুষ্ঠুভাবে হবে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে বিএনপি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
প্যানেল/মজি