
ছবি: সংগৃহীত
আজকের আধুনিক পাইপ, পোরসেলিন কিংবা প্লাম্বিং সিস্টেম আবিষ্কারের অনেক আগেই, মানবসভ্যতা একটি জটিল কিন্তু মৌলিক চাহিদা পূরণে বিস্ময়কর সমাধান খুঁজে পেয়েছিল- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আর এই যাত্রার এক বিশাল নিদর্শন ছিল ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতার টয়লেট ও ড্রেনেজ সিস্টেম, যা আজও গবেষকদের বিস্মিত করে।
প্রায় ৪,৫০০ বছর আগে, ব্রোঞ্জ যুগের এই সভ্যতা—বিশেষত মোহেঞ্জোদাড়ো, হরপ্পা, ধোলাভিরা ও লোথালের মতো শহরগুলো বিশ্বের প্রথম পরিকল্পিত শহর হিসেবে পরিচিত।
ইন্দাস সভ্যতার প্রতিটি স্তরের মানুষই ব্যবহার করত ইটের তৈরি ঘর, যার ভেতরে থাকত ছোট টয়লেট চেম্বার। এগুলো ছিল বাড়ির বাইরের দেয়াল ঘেঁষে বা স্নানঘরের পাশে।
এই টয়লেটগুলোতে বর্জ্য প্রবাহিত হতো উঁচু থেকে নিচে নামা টেরাকোটা বা ইটের পাইপ দিয়ে। সেগুলো শেষ পর্যন্ত যুক্ত ছিল আচ্ছাদিত ইটের ড্রেনের সঙ্গে, যা শহরের রাস্তাঘাটের নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতো।
এখানে কোনও আধুনিক ফ্লাশ ছিল না। বরং বাসিন্দারা মাটির কলসি বা পাত্র থেকে পানি ঢেলে বর্জ্য সরাতেন। ড্রেনগুলোতে লিকেজ রোধে চুন বা জিপসামের প্লাস্টার ব্যবহার করা হতো।
বিশেষ করে বড় ড্রেনগুলোতে দেখা গেছে ম্যানহোল কাভার ও নজরদারি গর্ত, যা নির্দেশ করে তাঁরা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ভালভাবেই বুঝতেন।
মোহেঞ্জোদাড়োর 'গ্রেট বাথ' ছিল একটি বিশাল পানির ট্যাংক, যা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রায় প্রতিটি গলিতেই ছিল আচ্ছাদিত ড্রেন, বড় বাড়িতে ব্যক্তিগত কূপ ও স্নানঘর ছিল স্বাভাবিক।
ইন্দাস সভ্যতার বিশাল অর্জন কেবল প্রযুক্তিতে নয়—তাদের শহুরে জীবনে পরিচ্ছন্নতাকে কেন্দ্র করে গঠিত একটি সাংস্কৃতিক চেতনায়। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরেই টয়লেট থাকা এই সভ্যতার সামাজিক ন্যায়বোধকে নির্দেশ করে।
এদের সমাজব্যবস্থায় কোনও রাজপ্রাসাদ বা সমাধিস্তম্ভের চিহ্ন নেই, তবুও শহরজুড়ে রয়েছে এক অভাবনীয় সমতা ও কাঠামোগত একতা—যা সাধারণ মানুষের সম্মিলিত চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
ইন্দাস লিপি আজও অজানা রয়ে গেলেও, এক জিনিস স্পষ্ট, তারা পরিচ্ছন্নতা ও নাগরিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক আধুনিক সভ্যতাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
রোমান অ্যাকুয়াডাক্ট বা মধ্যযুগীয় স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা আসার হাজার বছর আগেই, ইন্দাস মানুষরা জানত শহরের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য কীভাবে নির্মাণ করতে হয় এক উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
মুমু ২