
আফ্রিকার জাম্বিয়ার Chimfunshi Wildlife Orphanage Trust-এ বসবাসকারী শিম্পাঞ্জিরা নিজেদের মধ্যে এক অদ্ভুত ফ্যাশন ট্রেন্ড গড়ে তুলেছে— তারা কানের ভেতর এবং পশ্চাতে (rectum) ঘাস ও কাঠির টুকরো ঝুলিয়ে রাখছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
২০১০ সালে, ইউট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিহেভিওরাল বায়োলজির সহকারী অধ্যাপক এড ভ্যান লিউয়েন ও তাঁর দল প্রথম লক্ষ্য করেন, এক নারী শিম্পাঞ্জি কানে ঘাস ঝুলিয়ে রেখেছে, এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই একই আচরণ শুরু করে দেয় একই দলের অন্য শিম্পাঞ্জিরাও।
গবেষকরা বলেন, এই ঘাস বা কাঠি ব্যবহারের পেছনে কোনো শারীরিক ব্যথা বা চুলকানির কারণ পাওয়া যায়নি। বরং এটি ছিল এক প্রকার সামাজিক রীতিনীতিভিত্তিক “ফ্যাশন ট্রেন্ড”, যেটি গোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিকভাবে শেখা হয়েছে।
এক দশক পর আরেকটি গ্রুপে একই ট্রেন্ড!
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এক দশকেরও বেশি সময় পর, স্যাংচুয়ারির অন্যপ্রান্তে থাকা আরেকটি শিম্পাঞ্জি দলের মধ্যেও দেখা যায় একই রকম আচরণ— এবার পশ্চাতে কাঠি ঢোকানোর প্রবণতাও যুক্ত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, দুই দলের দূরত্ব প্রায় ৯ মাইল, অর্থাৎ প্রথম দলের কাছ থেকে তারা এটি সরাসরি দেখতে বা শিখতে পারেনি। তখন প্রশ্ন ওঠে— তবে কি মানুষের সহায়তাকারীরা (caregivers) প্রভাব ফেলেছে?
ভ্যান লিউয়েন জানান, প্রথম দলের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা অভ্যস্ত ছিলেন কানের ভেতর কাঠি বা দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে পরিষ্কার করতে। ধারণা করা হচ্ছে, শিম্পাঞ্জিরা এই অভ্যাস মানুষদের কাছ থেকেই শিখেছে এবং পরে সামাজিক শেখার মাধ্যমে এটি একে অন্যকে অনুসরণ করেছে।
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য "ফ্যাশন"?
ভ্যান লিউয়েন আরও একটি উদাহরণ দেন নেদারল্যান্ডসের এক চিড়িয়াখানা থেকে, যেখানে এক নারী শিম্পাঞ্জি “মনে হচ্ছে বাচ্চা বহন করছে” এই ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করে, যদিও তার কোনো বাচ্চা ছিল না। ধীরে ধীরে গোটা নারীগোষ্ঠী এই একই হাঁটার ধরণ গ্রহণ করে। এমনকি পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া নতুন দুটি নারী শিম্পাঞ্জির মধ্যে যে একজন দ্রুত ভঙ্গিটি গ্রহণ করেছিল, তাকে দ্রুত দলভুক্ত করে নেওয়া হয়, আর যে তা করেনি, তাকে গ্রহণে সময় লাগে।
এর মানে হলো, এইসব “অদ্ভুত” আচরণ হয়তো আসলে গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার কৌশল।
বন্য পরিবেশেও সম্ভব, শুধু সময় দরকার
স্যাংচুয়ারিতে শিম্পাঞ্জিরা মুক্ত জীবনের তুলনায় অনেক বেশি অবসর পায়, কারণ তাদের শিকারি বা অন্য দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই। এই বাড়তি অবসরের মধ্যেই তারা এসব সামাজিক ট্রেন্ড গড়ে তোলে।
ভ্যান লিউয়েন বলেন, বন্য শিম্পাঞ্জিরাও হয়তো একই রকম সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে, তবে তা হয়তো এখনো পর্যবেক্ষণ বা নথিভুক্ত হয়নি।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন: কী পরিমাণে শিম্পাঞ্জিরা নতুন সংস্কৃতি উদ্ভাবন করতে পারে?
গবেষণার পরবর্তী ধাপে ভ্যান লিউয়েন এখন যাচাই করতে চান— শিম্পাঞ্জিরা কি বারবার নতুন খাবার সংগ্রহের কৌশল উদ্ভাবন করতে পারে? তারা কি “cumulative culture” গড়ে তুলতে পারে, যেমনটি মানুষ করে?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমেট বিহেভিয়ারের গবেষক এলোডি ফ্রেম্যান বলেন, “শিম্পাঞ্জিরা যদি মানুষের কাছ থেকে শেখে, তাহলে কি তারা অন্য প্রাণীদের কাছ থেকেও শিখতে পারে? এটা প্রাইমেট গবেষণায় এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।”
Jahan