
ছবি: সংগৃহীত
একজন মানুষের জীবনের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হলো জন্ম নিবন্ধন। এটি না থাকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। না করলে ভবিষ্যতে নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হতে পারে।
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইনেই সহজে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয় এবং এখন অধিকাংশ নিবন্ধন অনলাইনের মাধ্যমেই হচ্ছে।
কেন জন্ম নিবন্ধন জরুরি?
* নাগরিক অধিকার প্রমাণ: এটি আপনার বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করে।
* সরকারি সুবিধা গ্রহণ: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভাতা ইত্যাদি পেতে প্রয়োজন হয়।
* আইনগত দলিল: বয়স ও পরিচয়ের বৈধ প্রমাণপত্র।
* ভুল সংশোধনের সুযোগ: অনলাইনে যাচাই করে ভুল থাকলে সংশোধন করা যায়।
* জালিয়াতি প্রতিরোধ: আপনার পরিচয় অন্য কেউ ব্যবহার করছে কিনা, তা জানা সম্ভব হয়।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করবেন যেভাবে
১. প্রথমে ওয়েবসাইটে যান: [bdris.gov.bd](https://bdris.gov.bd)
২. ঠিকানা নির্বাচন করুন: জন্মস্থান অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করুন। বিদেশে জন্ম হলে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্বাচন করুন।
৩. ফরম পূরণ করুন:
* নাম (বাংলা ও ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে), জন্ম তারিখ
* বাবা-মায়ের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম সনদ নম্বর ও জাতীয়তা
* জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা, আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ইমেইল
৪. তথ্য যাচাই ও সাবমিট করুন: ফর্ম পূরণ শেষে তথ্য যাচাই করে সাবমিট করুন।
৫. আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করুন: এ নম্বর দিয়ে আপনি আবেদন স্ট্যাটাস জানতে পারবেন।
৬. আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন: ১৫ দিনের মধ্যে প্রিন্ট কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিন।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন যেভাবে
১. ওয়েবসাইটে যান: [everify.bdris.gov.bd](https://everify.bdris.gov.bd)
২. ১৭-সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ (YYYY-MM-DD ফরম্যাটে) দিন।
৩. ক্যাপচা পূরণ করে ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করুন।
সঠিক তথ্য দিলে আপনার নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শিত হবে।
জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে সংশোধনের নিয়ম
১. ওয়েবসাইটে যান: [bdris.gov.bd](https://bdris.gov.bd)
২. ‘জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের আবেদন’ অপশন সিলেক্ট করুন।
৩. সংশোধনের আবেদন ফরম পূরণ করে প্রমাণপত্র (NID, জন্মসনদ, পিতা-মাতার পরিচয়) স্ক্যান করে আপলোড করুন।
৪. নির্ধারিত ফি (১০০–২০০ টাকা অঞ্চলভেদে) জমা দিয়ে আবেদন জমা দিন।
৫. একটি রেফারেন্স নম্বর পাবেন, সেটি দিয়ে আপনার আবেদনের অবস্থা অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন।
*চালান আপলোড সমস্যা: ফাইল ১MB এর বেশি হলে আপলোড হবে না। সঠিক ফি দিন।
*Possible Duplicate: তথ্য অন্য কারো সঙ্গে মিলে গেলে অতিরিক্ত যাচাই করতে হয়। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত দরকার হয়।
হারানো জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃপ্রাপ্তির উপায়
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করে প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করুন। আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* শিশুর জন্ম প্রমাণপত্র (যেমন: হাসপাতালের ছাড়পত্র)
* পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
* পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি (যদি থাকে)
* ঠিকানার প্রমাণ (ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি)
উল্লেখ্য: স্থানভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন হতে পারে। তাই আবেদনপূর্বে স্থানীয় অফিসে খোঁজ নেওয়া উচিত।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতিটি তথ্য সতর্কভাবে পূরণ করুন। ভুল তথ্য দিলে পরবর্তীতে ভোগান্তি হতে পারে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে সব তথ্য পুনরায় যাচাই করুন।
ছামিয়া