ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট না রেডি ফ্ল্যাট? কোনটি বেশি লাভজনক, জেনে নিন

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ৭ জুলাই ২০২৫

নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট না রেডি ফ্ল্যাট? কোনটি বেশি লাভজনক, জেনে নিন

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে শহরজীবনের বাস্তবতায় ফ্ল্যাট কেনা অনেকের জীবনের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সামান্য অসতর্কতা ভবিষ্যতে বড় ধরনের আর্থিক ও আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে আপনাকে। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে নিরাপদ ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

 

 

প্রথমেই যাচাই করে নিতে হবে, যেই প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছেন, তাদের বৈধতা ও সুনাম কতটা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন (রিহ্যাব)-এর সদস্য কি না, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। একই সঙ্গে দেখতে হবে, পূর্বে তারা সময়মতো ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে কি না—এই অতীত রেকর্ড অনেক কিছু বলে দেয়। কারণ, প্রায়ই দেখা যায়, ফ্ল্যাট কিনেও ক্রেতারা বছরের পর বছর হস্তান্তরের অপেক্ষায় থাকেন। এমনকি কেউ কেউ ১০–১২ বছরেও ফ্ল্যাট বুঝে পান না।

এরপর গুরুত্ব পাবে যেই ভবনে বা প্রকল্পে আপনি ফ্ল্যাট কিনতে চান, সেটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কি না। রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবে, ভবনটি রাজউকের অনুমোদন পেয়েছে কি না। পাশাপাশি জমির বৈধতা যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির দলিল, মালিকানা এবং দখলদার সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। ভূমি অফিসে গিয়ে জমির খতিয়ান ও অন্যান্য নথি যাচাই করে নেওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।

ফ্ল্যাটের আয়তন ও নকশা সঠিক কি না সেটিও যাচাই করতে হবে। অনেক সময় বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত আয়তন বাস্তবে পাওয়া যায় না, যা প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়া, ফ্ল্যাট কেনার জন্য যদি ঋণ নিতে চান, তাহলে শুরুতেই নিজের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় একটি পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন। আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন, এবং বাকিটা কিভাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেবেন, তা ঠিক করে নিতে হবে। বর্তমানে দেশে বহু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি হোম লোন দিচ্ছে। তবে এসব ঋণের বিপরীতে সাধারণত ফ্ল্যাট বা প্লটটি বন্ধক রাখতে হয়।

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) থাকা বাধ্যতামূলক। টিআইএন ছাড়া ফ্ল্যাট কিংবা জমি নিবন্ধন করা যাবে না। তাই আগে থেকেই টিআইএন সংগ্রহ করে রাখা উচিত।

 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি কোন ধরণের ফ্ল্যাট কিনছেন, নির্মাণাধীন না প্রস্তুত। যদি নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট কেনেন, তাহলে সাধারণত মূল্য কিছুটা কম পড়ে এবং দ্রুত হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাড়িভাড়ার খরচও বাঁচে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি সেই ভাড়ার টাকাতেই সহজে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।

রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে বিভিন্ন দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। প্রায় ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাটও রয়েছে বাজারে। আপনার চাহিদা, অবস্থান ও বাজেটের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

সুতরাং, ফ্ল্যাট কেনা মানে শুধু একটি স্থায়ী ঠিকানা কেনা নয়, বরং এটি একটি বড় বিনিয়োগ ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা। তাই অল্পের ভুলে যেন বড় ক্ষতি না হয়, সে জন্যই ফ্ল্যাট কেনার আগে সব দিক সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ছামিয়া

×