
ছবি: সংগৃহীত
ইউরিক অ্যাসিড, যা মানবদেহের একটি স্বাভাবিক উপজাত, এর মাত্রা বেড়ে গেলে তা নীরবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। অনেক সময় গাউট বা কিডনি স্টোনের মতো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই এটি ধীরে ধীরে দেহের ভেতরে ক্ষয়সাধন করতে থাকে। এটি এক নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে সৃষ্ট সাতটি নীরব ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন:
১. হৃদরোগ ও রক্তনালীর ক্ষতি: উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ধমনিকে শক্ত ও সংকীর্ণ করে তোলে। এর ফলস্বরূপ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়।
২. কিডনির অবনতি: ইউরিক অ্যাসিড কিডনির ভেতরে সূক্ষ্ম স্ফটিক আকারে জমা হয়, যা ধীরে ধীরে কিডনি টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দাগযুক্ত করে ফেলে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা কিডনি ফেইলিওরের মতো মারাত্মক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
৩. মেটাবলিক সিন্ড্রোম: ইউরিক অ্যাসিড ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি স্থূলতা (ওবেসিটি), উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড এবং নিম্ন এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
৪. হাড় ও জয়েন্টের ক্ষয়: গাউটের দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড জয়েন্ট ও কার্টিলেজে জমা হতে পারে। এর ফলে এটি আর্থ্রাইটিস এবং স্থায়ী জয়েন্ট ড্যামেজের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা চলনক্ষমতাতেও প্রভাব ফেলে।
৫. কিডনি স্টোন: ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিকগুলো একত্রিত হয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। এই পাথর মূত্রনালীকে ব্লক করে প্রস্রাবের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যা ইনফেকশন বা কিডনি ড্যামেজের কারণ হতে পারে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ: ইউরিক অ্যাসিড রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। এই উচ্চ রক্তচাপ প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ ছাড়াই বিকশিত হয় এবং পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ: শরীরে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নিম্ন-স্তরের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং এমনকি কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও।
প্রতিকারের উপায়: এই নীরব ক্ষতি থেকে বাঁচতে কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি:
-
খাদ্যাভ্যাস: পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার (যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার) কম গ্রহণ করুন।
-
জলীয় পানীয়: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
-
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন আমলকী, লেবু) খাদ্যতালিকায় রাখুন।
-
পানীয় বর্জন: অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয় কঠোরভাবে এড়িয়ে চলুন।
-
ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
সতর্কতা: যদি আপনি ক্লান্তি, জয়েন্টে হালকা ব্যথা বা ঘন ঘন কিডনি ইনফেকশনে ভোগেন, তবে দ্রুত ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করিয়ে নিন। সময়মতো শনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ মারাত্মক ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
সাব্বির