ভারত ত্রিপুরার হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালির বর্জ্য ও নর্দমার দূষিত পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তিতাস নদীসহ আখাউড়ার খালবিল নদীনালার পানিতে মিশে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এলাকার মানুষের মধ্যে বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এসব বিষাক্ত পানি দিয়ে সীমান্ত এলাকার ধানের জমি সেচ দেওয়ায় জমির উর্বরা শক্তিও নষ্ট হচ্ছে। ত্রিপুরায় ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরা থেকে এই সব বিষাক্ত পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আখাউড়ার কালন্দি খাল ও জাজি নদী দিয়ে আসছে।
জানা গেছে, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্য মিশে সেখানের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি কুচকুচে কালো আর উৎকট গন্ধযুক্ত। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার এই পানি পরীক্ষা করা হলেও এই বিষাক্ত পানি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পরীক্ষায় এই পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ- সিসা, সালফার, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও আয়রনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তখন এই পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পরিশোধন করতে ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রাম কৃপাল যাদব ইটিপি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আট বছর পার হয়েছে, কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, এই দূষিত পানির কারণে পানিবাহিত চর্ম রোগসহ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি বছর আখাউড়ায় চর্মরোগীর পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম জানান, এই পানির মান ভালো না হলেও একমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রায়ই মাঠ দিবসের মিটিংয়ে এ পানি ব্যবহার না করতে কৃষকদের অনুরোধ করেন।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া জানায়, ব্যবসায়ী নেতারা ও সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে কালো পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য (কসবা-আখাউড়া) নির্বাচনীয় এলাকার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কবীর আহমেদ ভূঁইয়া জানান, তিতাস নদী আমাদের প্রাণের অংশ। ভারতের আগরতলা শহর থেকে যেভাবে অবাধে বর্জ্য পানি এসে এই নদীটিকে দূষণ করছে তা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মেনে নেওয়া যায় না। সরকারকে অবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তুলে ধরা উচিত।