ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণ কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ১ জুলাই ২০২৫

গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণ কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলা

ইসরাইলি বিমান হামলার পর আল বাকা ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করছেন ফিলিস্তিনিরা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ের একটি ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রসহ একাধিক স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। গাজা শহর ও উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়, যার মধ্যে শুধু আল-বাকা নামে এক সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফেতেই নিহত হন ৩৯ জন। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ হামলা চালানো হয়। খবর আলজাজিরার। 
আল-বাকা নামে উত্তর গাজার ওই সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফেটিতে নারী ও শিশুসহ অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন একটি জন্মদিন উদ্যাপন করতে। সেখানে হওয়া হামলায় নিহতদের মধ্যে ইসমাইল আবু হাতাব নামে এক সাংবাদিকও রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সেখানে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। ইয়াহিয়া শরিফ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। এই জায়গা কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

শিশুদের জন্মদিন চলছিল সেখানে। এদিকে গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ’ বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপরও হামলা চালানো হয়। হামাদা আবু জারাদে নামের একজন জানান, তারা হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে সরে যাওয়ার নোটিস পান। তিনি বলেন, আমরা কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। গত ৬৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি। প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি। এছাড়া মধ্যগাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল চত্বরে চালানো আরেক হামলায় আহত হন অনেকে। সেখানে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। 
হামলার সময় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। অনেকেই দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আলজাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, এই হাসপাতালে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে। প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর আরেকটি মারাত্মক আঘাত হচ্ছে এই হামলা। আলজাজিরা বলছে, ত্রাণের আশায় দাঁড়ানো মানুষকে লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষারত মানুষের ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন এবং ৫০ জন আহত হন। ইসরাইলের এই হামলার শিকার অধিকাংশই ছিলেন ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ ফিলিস্তিনি। জিএইচএফ গত মে মাসের শেষদিকে সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এসব কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

এখন পর্যন্ত এসব হামলায় অন্তত ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এদিকে ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাদের সরাসরি নিরস্ত্র ত্রাণপ্রার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে বলা হয়েছে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক সেনা জানিয়েছেন, অনেক সময় কোনো হুমকি না থাকলেও ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও সহিংসতার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভেতরেই শরণার্থীদের জন্য স্থাপিত একটি তাঁবুতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। আর এটি রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। এটি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত হামলার অংশ।

এদিকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির মধ্যে ইসরাইলের কাছে বিপুল পরিমাণে গাইডেড বোমা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে দেশটি গাইডেড বোমা কিট বিক্রি ও সংশ্লিষ্ট সহায়তা দেওয়ার অনুমোদনও দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ইসরাইলকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। মূলত অস্ত্র বিক্রির এই অনুমোদন এমন এক সময় দেওয়া হলো যখন ইসরাইল গাজা উপত্যকাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইসরাইলের কাছে ৫১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের গাইডেড বোমা কিট ও সংশ্লিষ্ট সহায়তা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে।

আরো পড়ুন  

×