ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মশার ছদ্মবেশে গুপ্তচর! চীনের ভয়ংকর প্রযুক্তিতে ঘুম হারাম ভারত ও আমেরিকার

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৪, ১ জুলাই ২০২৫

মশার ছদ্মবেশে গুপ্তচর! চীনের ভয়ংকর প্রযুক্তিতে ঘুম হারাম ভারত ও আমেরিকার

ছবি: জনকণ্ঠ

চীন এবার তৈরি করেছে এমন এক ক্ষুদ্র ড্রোন, যা দেখতে হুবহু একটি মশার মতো—কিন্তু এর ক্ষমতা রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। চীনের সামরিক রোবোটিক্স গবেষণাগারে বহু বছরের গবেষণার ফল এই 'মস্কিটো মাইক্রো ড্রোন'। এটি আসলে একটি বিশেষ সামরিক সারভেলেন্স ড্রোন, যা খালি চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব।

কী এই মশা ড্রোন?

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বরাতে জানা গেছে, মাত্র ০.৬ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ গ্রাম এরও কম ওজনের এই ড্রোনটি তৈরি হয়েছে বিশেষ কার্বন ফাইবার মিশ্রিত পদার্থ দিয়ে। বাতাসের হালকা স্রোতেও এটি উড়ে যেতে পারে। এতে রয়েছে উন্নত ক্যামেরা ও সাউন্ড রেকর্ডার, যা রাতের অন্ধকারেও ভিডিও ধারণ এবং গোপনে কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে।

প্রযুক্তির চরম ব্যবহার

ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এই ড্রোনে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), যা নিজে থেকেই টার্গেট শনাক্ত করে তাকে অনুসরণ করতে সক্ষম। এর ডানার শব্দ একটি প্রকৃত মশার মতো হওয়ায় এটি সহজেই যেকোনো নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে নজরদারি করতে পারে—প্রায় অদৃশ্য ও নিরবভাবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের দুশ্চিন্তা

এই প্রযুক্তি ঘিরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ক্ষুদ্র ড্রোন শনাক্তে বিশেষ রাডার বসানোর পরিকল্পনা করেছে। ইউরোশিয়ান টাইমসের মতে, বিষয়টি নিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা মহলে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই ড্রোনকে 'গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি' হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক সেন্সর ও ইলেকট্রনিক জ্যামার প্রযুক্তি তৈরিতে নেমেছে।

ব্ল্যাক হর্নেট বনাম মস্কিটো ড্রোন

চীনের মস্কিটো ড্রোনের তুলনা করা হচ্ছে নরওয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিখ্যাত ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো ড্রোনের সঙ্গে। তবে আকার, ওজন ও সক্ষমতায় চীনা ড্রোন অনেক এগিয়ে। ব্ল্যাক হর্নেট যেখানে ১৬ সেন্টিমিটার লম্বা ও ওজন প্রায় ১৮ গ্রাম, চীনের ড্রোনটির দৈর্ঘ্য মাত্র ০.৬ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১ গ্রামেরও কম। উড়তে পারে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত, যেখানে ব্ল্যাক হর্নেটের সর্বোচ্চ সময় ২৫ মিনিট।

বিপজ্জনক দিক

টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, এই ড্রোন EMP (Electromagnetic Pulse) ছড়িয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে অকার্যকর করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এটি রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি বা বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবহনেও ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

ব্যয় ও ভবিষ্যৎ

প্রতিটি ড্রোনের প্রাথমিক উৎপাদন খরচ প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। তবে চীনের সামরিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন শুরু হলে এই খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘মস্কিটো মাইক্রো ড্রোন’ প্রযুক্তির জগতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি শুধু চীনের সামরিক শক্তি নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সংজ্ঞাই পাল্টে দিতে পারে।

আসিফ

আরো পড়ুন  

×