
চাকরির বাজার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি একটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা সিভির গুরুত্বও এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০২৫ সালে একটি সাধারণ সিভি আর যথেষ্ট নয় চাকরি পেতে হলে দরকার একটি নিখুঁত, লক্ষ্যভিত্তিক এবং কৌশলগতভাবে লেখা সিভি, যা শুধু মানুষের চোখ নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ফিল্টারও পেরিয়ে যেতে সক্ষম।
কেন সিভির ওপর সময় ব্যয় করাই সেরা বিনিয়োগ
চাকরির খোঁজ শুরু করার পথটি অনেকের কাছেই ভয়ঙ্কর জটিল মনে হয়। দিনের পর দিন সাড়া না পাওয়া কিংবা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাকে হতাশ করে তুলতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার সিভি-ই আপনার ব্যক্তিগত মার্কেটিং ডকুমেন্ট। এটিকে ক্যারিয়ারের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে দেখুন।
একটি শক্তিশালী সিভি তৈরি করতে সময় ও মনোযোগ দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিয়ে আপনি যদি যত্ন সহকারে কাজ করেন, তবে ২০২৫ সালে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরির সুযোগ অনেকটাই বাড়বে।
প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে যাচ্ছে আপনার সিভি?
বর্তমানে অধিকাংশ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সিভি যাচাইয়ের কাজটি করা হয় Applicant Tracking System (ATS)-এর মাধ্যমে, যা নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড খুঁজে বের করে সিভিগুলিকে বাছাই করে। অনেক সময় AI প্রযুক্তি পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্লেষণ করতে পারে, যার ফলে আপনি হয়তো অজান্তেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন তালিকা থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের চোখে পড়ার সুযোগও অনেক সময় থাকে না। তাহলে সমাধান কী?
২০২৫ সালে দুর্দান্ত সিভি লেখার কৌশল
১. প্রতিবার নতুন করে শুরু করুন: পুরনো সিভিতে শুধু তথ্য যোগ করলে তা অনেক সময় অগোছালো ও বিভ্রান্তিকর লাগে। তাই নতুন চাকরির খোঁজ শুরু করলে সিভিটিও শুরু করুন একেবারে নতুনভাবে।
২. পাঠকের জায়গায় নিজেকে রাখুন: আপনি যদি সেই প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকর্তা হতেন, তাহলে কি এই সিভিটি বেছে নিতেন? যেকোনো সিভি জমা দেওয়ার আগে একবার নিজেই ভেবে দেখুন এটি কি যথেষ্ট স্পষ্টভাবে আপনার দক্ষতা তুলে ধরছে?
৩. দক্ষতা আলাদা করে তুলে ধরুন: একটি পৃথক Skills Section রাখুন, যেখানে আপনার কারিগরি ও ব্যক্তিগত দক্ষতাগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। চাকরির বিবরণের সাথে মিল রেখে কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং সম্ভব হলে সংখ্যাসূচক তথ্য যোগ করুন।
৪. ফাঁক ও পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিন: কোনো গ্যাপ, দ্রুত চাকরি পরিবর্তন বা শিল্পক্ষেত্র পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করুন। ইতিবাচকভাবে তথ্য উপস্থাপন করুন যেন নিয়োগকারী আপনার প্রেক্ষাপটটি বুঝতে পারেন।
৫. প্রোফাইল হেডার নিখুঁত করুন: হেডারেই বোঝাতে হবে আপনি কী পারেন, কী অর্জন করেছেন এবং কিভাবে নতুন প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে পারেন। এখানে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রাখা চলবে না।
৬. অতিরিক্ত তথ্য বাদ দিন: খুব অল্পমেয়াদী কিংবা অপ্রাসঙ্গিক চাকরির অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে লিখুন বা পুরোপুরি বাদ দিন।
৭. শক্তিশালী ক্রিয়া-ক্রিয়াপদ ব্যবহার করুন: প্রতিটি পয়েন্ট শুরু করুন সক্রিয় ক্রিয়াপদ দিয়ে, যেমন—managed, developed, achieved ইত্যাদি।
৮. কী-ওয়ার্ড মিলিয়ে নিন: আপনার সিভিকে চাকরির বিবরণের সাথে মিলিয়ে দেখুন। যত বেশি মিল, AI তত বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে তথ্য যেন সবসময় বাস্তবভিত্তিক ও প্রাসঙ্গিক হয়।
৯. অর্জন সংখ্যায় প্রকাশ করুন: “সেলস বাড়িয়েছি” না লিখে বলুন “বছর শেষে ১৫% সেলস বৃদ্ধি করেছি”। নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকলে তা বেশি প্রভাব ফেলে।
১০. বিন্যাস ও উপস্থাপনায় যত্ন নিন: বানান, ফন্ট, bullet format, লেআউট ইত্যাদি ঠিক রাখুন। পড়তে যেন সহজ হয়।
১১. নিজের সাফল্য তুলে ধরুন: আপনি কোন অর্জনে গর্বিত, কী কাজে প্রশংসা পেয়েছেন এসব স্পষ্টভাবে লিখুন। অনুমানের ওপর নির্ভর না করে পাঠককে সব তথ্য দিন।
১২. বাড়তি টিপস: যদি চাকরির যোগ্যতা হিসেবে কোনো ডিগ্রি থাকে যেটি এখনো অর্জন করেননি, তবে লিখুন: “পরবর্তী পেশাগত লক্ষ্য হিসেবে আমি CIPD সার্টিফিকেশন অর্জনের পরিকল্পনা করেছি।” এটি AI-র চোখে ইতিবাচক সিগনাল হিসেবে ধরা পড়বে।
এআই-এর ভূমিকা
AI এখন সিভি লেখার ক্ষেত্রেও শক্তিশালী সহায়ক। তবে এটি যেন একমাত্র লেখক না হয়, বরং সহকারী হয়।AI দিয়ে আপনি করতে পারেন:কনটেন্ট আইডিয়া জেনারেট,কী-ওয়ার্ড শনাক্ত,ফরম্যাট সাজাতে সহায়তা
তবে AI-র তৈরি লেখাকে অবশ্যই নিজে যাচাই করে সংশোধন করুন যেন তা সঠিক, প্রাসঙ্গিক এবং আপনার আসল অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে প্রতিফলিত করে।
প্রত্যাখ্যান মানেই আপনি অযোগ্য এমন নয়। বরং এটি সিভির প্রাসঙ্গিকতা ও উপস্থাপনার অভাব হতে পারে। যেসব আবেদন সফল হয়নি, সেগুলোর বর্ণনা বিশ্লেষণ করুন এবং বুঝুন কী কী জায়গায় উন্নতি করা যায়।
যোগাযোগ ও পরামর্শ নিন
পেশাদারদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ুন,ইন্ডাস্ট্রির ইভেন্টে অংশ নিন,রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির সাহায্য নিন, যারা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড ও লক্ষ্য বুঝে আপনাকে সঠিক পদের সঙ্গে মেলাতে পারবে।
২০২৫ সালের চাকরির দুনিয়ায় সফল হতে হলে কেবল সিভি তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, সেটিকে ধারালো ও উপযোগী করে তোলা জরুরি। সময় দিন, শ্রম দিন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন, আপনার স্বপ্নের চাকরি এক ধাপ কাছেই থাকবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3y4k9ndr
আফরোজা