
মানুষের জীবনে পাপ ও পুণ্যের হিসাব শুধুই আখিরাতের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের আলোকে দেখা যায়, এমন কিছু পাপ রয়েছে যেগুলোর শাস্তি শুধু পরকালের জন্য নয়, দুনিয়াতেই তার প্রভাব ও শাস্তি নেমে আসে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এসব বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইহকাল মুসলিম জীবনের একটি পরীক্ষার মঞ্চ। এখানে যারা আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। আর যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তবে এমন কিছু পাপ রয়েছে যেগুলোর শাস্তি দুনিয়াতেই নেমে আসে, আখিরাতে তো আছেই।
মাতা-পিতার অবহেলা: যেটির শাস্তি নেমে আসে দুনিয়াতে
আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সামনে বললেন, “ওই ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক।” এ কথা তিনি তিনবার বললেন। তখন সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কার কথা বলছেন?” তিনি জবাবে বললেন, “যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, তারপরও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না।”
সতী নারীর প্রতি অপবাদ: অভিশপ্ত জীবনের ইঙ্গিত
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যারা সৎ, পবিত্র, নিরপরাধ মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ রটায়, তাদের ওপর দুনিয়া ও আখিরাতের অভিশাপ নেমে আসে। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। এই ধরনের অন্যায় কাজ সমাজে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে এবং ব্যক্তি জীবনেও আনে ধ্বংস।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা: দুনিয়াতেই আজাব অনিবার্য
আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ তাআলা বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তির শাস্তি দুনিয়াতেই দেন এবং আখিরাতের শাস্তিও তার জন্য জমা রাখেন না।”
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা ক্ষমতা পেলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাদ রয়েছে। তিনি তাদের বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিশক্তিকে করেন অন্ধ।”
ব্যভিচার: ঈমান চলে যায়, ফিরে আসে অবসরে
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কেউ ব্যভিচার করতে থাকে, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায় এবং মাথার ওপর ছায়ার মতো অবস্থান করে। যখন সে ব্যভিচার থেকে অবসর নেয়, তখন ঈমান তার কাছে ফিরে আসে।”
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, পাপের শাস্তি শুধু পরকালের জন্য নয়, অনেক সময় সেই শাস্তি দুনিয়াতেই নেমে আসে। মা-বাবার অবাধ্যতা, সতী নারীর প্রতি অপবাদ, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা কিংবা ব্যভিচার এসব পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, আল্লাহর ভীতি এবং ইসলামী আদর্শে জীবন গড়ে তোলা।
মহান আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে এসব ভয়াবহ গুনাহ থেকে রক্ষা করেন এবং হালাল, পবিত্র জীবনের দিকে ধাবিত হওয়ার তৌফিক দান করেন।
সূত্র:https://tinyurl.com/3t5yuma9
আফরোজা