
ছবিঃ সংগৃহীত
বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা দুটি অচেনা হৃদয়কে একত্রিত করে ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও শান্তির বন্ধনে আবদ্ধ করে। ইসলাম এই সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন—
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্যতম হলো— তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়ার সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা রূম, আয়াত: ২১)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, “বিয়ের আগে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সম্পূর্ণ অচেনা। কিন্তু বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, তারা যেন একে অপর ছাড়া চিন্তাই করতে পারেন না।”
মৃত স্বামীর চেহারা দেখা কি জায়েজ?
আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে— কেউ কেউ মনে করেন, স্ত্রী তার মৃত স্বামীর চেহারা দেখতে পারবেন না। আবার এটাও বলা হয়, স্বামীও স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার মুখ দেখা থেকে বিরত থাকবেন। কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে এ ধারণা সঠিক নয়।
ইসলামী ফিকহবিদগণের মতে, স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে স্ত্রী তার মৃত স্বামীর মুখ দেখতে পারবেন। একইভাবে, স্বামীও মৃত স্ত্রীর মুখ দেখতে পারবেন।
হাদিস শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেন, “আয়েশা! যদি তুমি আমার আগে মারা যাও, তবে আমি তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাজার নামাজ আদায় করব।” (ইবনে মাজাহ: ১৪৬৫)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মৃত স্ত্রীর দাফন-কাফনের সময় স্বামীর অংশগ্রহণ জায়েজ রয়েছে। একইভাবে, স্ত্রীর পক্ষেও স্বামীর মুখ দেখা কিংবা পাশে থাকা শরিয়তসিদ্ধ।
ফিকহগ্রন্থেও রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা
প্রখ্যাত ফিকহগ্রন্থ আদ-দুররুল মুখতার-এ বলা হয়েছে, স্ত্রী তার মৃত স্বামীর মুখ দেখতে পারবেন। (২/১৯৮)। একই কথা বলা হয়েছে মুয়াত্তা ইমাম মালেক-এও (৭৭ নম্বর হাদিস)।
ইসলাম মানুষকে আবেগ ও বাস্তবতার সমন্বয়ে চলার শিক্ষা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধুই পার্থিব নয়, বরং মৃত্যুর পরও তাদের মধ্যে সম্মান, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় থাকে। তাই মৃত স্বামীর মুখ দেখা স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ বৈধ— এতে শরিয়তের কোনো বাধা নেই।
আলীম